ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

চলে গেলেন সবার প্রিয় বাচ্চু ভাই

প্রকাশিত: ০২:২৯ এএম, ০১ জুন ২০১৫

প্রতিদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন অগণিত মানুষ। ক’জনকেই বা মানুষ মনে রাখে। তবে মনে রাখার মতোই একজন মানুষ ছিলেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। প্রায় তিন বছর ধরে কিডনিজনিত সমস্যার পর অবশেষে তিনিও রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেল ৪টায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। সদালাপী, আড্ডাপ্রিয়, প্রাণবন্ত ও উচ্ছল মানুষ ছিলেন তিনি। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, আর ফুটবল থেকে ভলিবল। এমনকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে সাফ ও এএফসি কর্মকর্তা পদেও সুপরিচিত ছিলেন তিনি। সেই চির পরিচিত ফুটবল সংগঠক আর নেই।

সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ তার প্রিয় ওয়ারী ক্লাবে নিয়ে আসা হয়। বাদ এশা বাফুফে ভবনসংলগ্ন মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতেই সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুর মরদেহ যশোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সোমবার বাড়িসংলগ্ন কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে তার মরদেহ। তার মৃত্যুতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, হারুনুর রশিদ, সাবেক মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ, বাফুফে সহ-সভাপতি বাদল রায়সহ আরও অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, বাফুফে ভলিবল ফেডারেশন, মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, দাবা ফেডারেশন, বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ, ক্রীড়া লেখক সমিতি, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার, হ্যান্ডবল ফেডারেশন, ওয়ারী ক্লাব, কাবাডি ফেডারেশন, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার ও সোনালী অতীত ক্লাব পৃথক পৃথক শোক বার্তা দিয়েছে।

১৯৪৬ সালে খেলাধুলা ও সংস্কৃতির এক উর্বর জনপদ হিসেবে পরিচিত যশোরে জন্মেছিলেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। যশোরের সম্মিলনি মহাবিদ্যালয়, মাইকেল মধুসূদন কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা বাচ্চুর সঙ্গে খেলাধুলার মিতালি স্কুল জীবন থেকেই। পাশাপাশি মঞ্চ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন। লেখালেখি করেছেন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ (খেলারামের দূরবীণ), দৈনিক মিল্লাত (বুল্লে তো বুলবেন কি বুলছে) এবং পাক্ষিক ক্রীড়াড্রামে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাক্ষিক ক্রীড়াজগতে ‘বলারাম বলে যা’ শিরোনামে নিয়মিত লিখেছেন। ‘ভলিবলের আইন-কানুন’ নামে বই তার লেখা। ‘গাধার যখন বুদ্ধি হলো’ একগুচ্ছ রম্যকাহিনী নিয়ে তার গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। বাচ্চু নিজ উদ্যোগে ‘নিবেদন’ নামে একটি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন কয়েক বছর। বেশ কয়েকটি ফুটবল প্রতিযোগিতার থিম সং লিখেছিলেন।

১৯৯১ সাল থেকে আমৃত্যু (মাঝে তিন বছর বিরতি) বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটিতে সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ১০ বছর। এএফসির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু।

ফুটবলের পাশাপাশি ভলিবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে ছিলেন। হয়েছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি। ভলিবল ক্লাব পার্টনার্সের প্রতিষ্ঠাতা বাচ্চু ১৯৭১ সাল থেকে জড়িত ছিলেন ওয়ারী ক্লাবের সঙ্গে। সেরা সংগঠকের পুরস্কার পেয়েছেন ক্রীড়ালেখক সমিতি ও ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থার। চিরকুমার বাচ্চু সংগ্রহ করতেন বিচিত্র ধরনের টুপি, ঘড়ি, কোর্টপিন ও লাইটার। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের রূপকার বাচ্চু ছিলেন বাফুফে মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান।

জেআর/এআরএস/এমএস