মিরপুরে পাকিস্তানি বশির চাচাকে হেনস্তার অভিযোগ
২ মার্চ। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস। এমন একটি দিনেই পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ এবং আবেগপূর্ণ একটি দিনে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ উঠে গেলো এশিয়া কাপের ফাইনালে। অথচ এই ম্যাচে এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, যেটা নিয়ে এখন চলছে তুমুল সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, পাকিস্তানের প্রতীক হয়ে ওঠা, তাদের সমর্থক বশির চাচার গায়ে জোর করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন, এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বাংলাদেশের পতাকাকেই অসম্মানিত করা হয়েছে।
বশির চাচার গায়ে বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে দেয়ার বেশ কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার সামনে বাংলাদেশী পতাকা জড়ানো সেই পাকিস্তানি সমর্থক কাঁদছেন।
কানাডা প্রবাসী জলিল চাচা বেশ কযেক বছর ধরেই পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। বিশ্বের যে প্রান্তেই পাকিস্তানের খেলা হোক, তিনি চলে যাবেন আফ্রিদিদের সমর্থণ জানাতে। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা দিয়ে লম্বা জামা বানিয়ে সেটা গায়ে জড়িয়ে তিনি উপস্থিত হবেন গ্যালারিতে। সে ধারাবাহিকতায় এবার এশিয়া কাপেও তিনি এলেন ঢাকায়। মিরপুরে পাকিস্তানের ম্যাচে, আফ্রিদিদের সমর্থণ জানিয়ে গিয়েছেন তিনি।
কিন্তু পাকিস্তানের পরাজয়ের পর গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে থাকা বশির চাচার গায়ে জোর করে বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ঢাকার মিরপুরের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার উৎসাহে এবং তার সামনেই জোর করে পাকিস্তানী নাগরিককে বাংলাদেশের পতাকা পরিয়ে দেয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে কয়েকজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বুধবার মিরপুরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলা শেষে গ্যালারিতে বসে থাকা ইলিয়াস মোল্লা তার সঙ্গীদের দিয়ে ডেকে আনেন পাকিস্তানি সমর্থক বশির আহমেদকে। তার গায়ে তখন পাকিস্তানি পতাকা দিয়ে বানানো পোশাক পরা ছিল। বশির আহমেদকে বাংলাদেশি পতাকা গায়ে জড়াতে বাধ্য করেন সাংসদ।’
মোশারফ হোসাইন জার্নালিস্ট নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ঘটনার ছবি দিয়ে লেখা হয়, ‘পৃথিবীর যেখানেই পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা হয়, পাকিস্তানের প্রতিটি খেলায় যিনি উপস্থিত থাকেন সেই বশিরকে ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বাংলাদেশের পতাকা পরিহিত অবস্থায় বাংলাদেশ বলতে বলেন।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানী সেই সমর্থন যখন কাঁদছেন তখন তাকে ঘিরে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ উল্লাস করছেন এবং মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন। তাদের মাঝখানে সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাকে নির্বিকারভাবে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। একটি ছবিতে সেই পাকিস্তানী সমর্থকের সাথে সংসদ সদস্যকে কথা বলতেও দেখা যাচ্ছে। তবে এ ঘটনায় ওই সংসদ সদস্যের সম্পৃক্ততা কতটুকু সেটি ছবি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানি এ সমর্থকের গায়ে জোর করে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে দেয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর ফেসবুকে অনেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার এই ঘটনাকে বাংলাদেশের পতাকার ‘অসম্মান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘একজন সুপরিচিত ক্রিকেট ভক্ত বাংলাদেশের মাঠে এসে লাঞ্ছিত হলেন; কিন্তু একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি মনে করি, বশির আহমেদ যতটুকু অসম্মানিত হয়েছেন তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অসম্মানিত হয়েছে আমাদের দেশের পতাকা। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের দামে কেনা পতাকাকে হাস্যস্পদ করেছেন আমার দেশের জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত (!) সদস্য। তিনি ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাহ। ক্রিকেট মাঠের আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ীও ইলিয়াস মোল্লাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেই আমার ধারণা। ফাইনাল ম্যাচের আগেই এ অপরাধের শাস্তি দেখতে চাই। এবং বিসিবির তরফ থেকে বশির আ্হমেদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।’
ওয়াসির আহমেদ বাবু নামের একজন লিখেছেন, ‘জোর করে কাউকে পতাকা পরিয়ে ক্রেডিট নেওয়া কাপুরুষের কাজ। হোক না পাকিস্তানের আইকন। বাংলাদেশিরা সব সময় আন্তরিক ও সাহসী ভূমিকার জন্য প্রশংসিত। পাকিরা সমগ্র বিশ্বেই নিন্দিত। তাই বলে কি একজনকে আমার দেশের পতাকা তার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ বলাতে হবে!! এতে আমার দেশের পতাকাই অসম্মানিত হয়েছে।’
রুবেল শিকদার নামে একজন লিখেছেন, ‘আমাদের কখনো হানাদার হওয়ার ইতিহাস নাই। সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ মূর্খতা আমাদের সেই ঐতিহ্যকে কালি মেখে দিলে।’ নাজিমুদ্দিন সামাদ নামের একজন লিখেছেন, ‘ছবিতে তো কিছুই প্রমাণিত হচ্ছে না। জোর করে পোশাক পরানো হয়েছিল নাকি উনি স্বেচ্ছায় পরেছিলেন? কোনটা?’
তবে বাংলাদেশি একটি মিডিয়া বশির চাচার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, ‘কেউ আমাকে জোর করে বাংলাদেশের পতাকা পরায়নি (নো বডি ফোর্সড), আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি, এখানকার মানুষ খুবই ভালো। এমনকি ফাইনালে বাংলাদেশের জয় নিয়েও আমি আশাবাদী।’
ফেসবুকে এই সংবাদ নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করছেন অনেকে। কেউ কেউ এমনও বলছেন, বাংলাদেশে বসে বশির চাচা সত্য বলতে হয়তো এখন ভয় পাচ্ছেন। এ কারণেই বলছেন, ‘আমাকে হ্যারাস করা হয়নি।’ যদিও ফেসবুকের অন্য একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বশির চাচা বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন। তবে বিবিসিসহ বিভিন্ন মিডিয়ার পক্ষ থেকে সাংসদ ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে এ ব্যাপারে জানার জন্য যোগযোগ করেও ব্যর্থ হন সবাই।
এর আগে গত বছর বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের সময় সুধীর গৌতম নামের একজন ভারতীয় নাগরিকে মিরপুর স্টেডিয়ামে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল।
আইএইচএস/এমএস