ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

খেলা শেষ না কইরা আইজ আর ক্ষেপ মারুম না

প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ১৩ মার্চ ২০১৬

রাত সাড়ে ১০টা। শাহবাগ মোড়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও এক রিকশাচালকের মধ্যে কথোপকথন চলছে। ‘ওই মামু, চলো আমাগোরে ধানমন্ডিতে নামাইয়া দিয়া আইবা। ভাড়া একটু বাড়াইয়া দিমুনে।’

শাহবাগ মোড়ে সিটের ওপর বসে বাংলাদেশ ওমানের খেলা দেখারত এক রিকশাচালককে উদ্দেশ্য করে বললেও নির্বিকার রিকশাচালক। সেকেন্ড ত্রিশেক পর ছাত্রদের একজন আবার তাকে উদ্দেশ্যে করে বললো ‘কী অইলো, কী কইলাম তোমারে, যাইবানা তুমি।’

এবার সিটে বসেই ঘাড় বাকিয়ে রিকশাচালকের উত্তর, ‘না মামা, খেলা দেখতাছি, বাংলাদেশরে না জিতাইয়া আইজ আর ক্ষেপ মারুম না।’ রিকশা না পেয়ে পায়ে হেটেই সামনে এগুলেন ছাত্র দুজন।

রিকশাচালকের নাম জীবন। মগবাজার মধুবাজারের গ্যারেজের ভাড়া রিকশা চালান। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের দারুণ ভক্ত। সন্ধ্যা থেকেই রিকশা চালানো বন্ধ করে শাহবাগ মোড়ের জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখছিলেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জীবন জানান, আইজ যে রোজগার কম অইছে তাতে দুঃখ নাই। তামিমের ছক্কা চাইরের মাইর দেইখ্যা মনডা ভইরা গেছে। অন্যান্য দিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনশ সাড়ে তিনশ টাকার ক্ষেপ মারলেও আইজ মাত্র ৩০ টাকার ক্ষেপ মেরেছেন। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং শেষ হলে একজন বৃদ্ধ মানুষের অনুরোধে চানখারপুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে এসেছেন। ফিরে এসে আবার খেলা দেখছেন।

রাত আনুমানিক ১০টা ৩৫ মিনিটে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হলেও যে জায়গাটিতে বসেছিলেন সেই জায়গাতেই খেলা শুরুর অপেক্ষায় বসেছিলেন জীবন।

শুধু জীবনই নন, তার মতো অসংখ্য রিকশাচালক রিকশা চালানো বন্ধ রেখে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত টিএসসি ও শাহবাগের জায়ান্ট স্ক্রিনে বাংলাদেশ ওমানের মধ্যেকার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের  খেলা দেখেন। ব্যাটিং এর সময় চার-ছক্কার মার দেখে একবার খুশিতে সিগারেট ফুঁকেন, চা-পান খান আবার বোলিং এর সময় উইকেট না পড়ার টেনশনে একই কাজ করেন।

পঞ্চগড়ের বাসিন্দা হরিপদ। থাকেন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জিতেই আছে। ওমানকে ১০০ রানের মধ্যেই আউট করে ফেলতে পারবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে যখন খেলা বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয় তখন অনেকেই স্থান ত্যাগ করলেও হরিপদ রিকশায় পা তুলে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছিলেন। তিনি জানালেন, যতক্ষণ খেলা শুরু হয়ে বাংলাদেশ না জিতবে ততক্ষণ এখানেই থাকবেন।

সরজমিন টিএসসি ও শাহবাগ ঘুরে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও রিকশাচালক সবাই নিজ নিজ পরিচয় ভুলে এক কাতারে সামিল হয়েছেন। জায়ান্ট স্ত্রিনের সামনে তখন তাদের একটাই পরিচয়, সবাই বাংলাদেশ টিমের সাপোর্টার।

এমইউ/বিএ

আরও পড়ুন