কনভেতে বিটিআরসির গণশুনানি, দেশি প্রযুক্তিতে নতুন মাইলফলক
কনভেতে বিটিআরসির গণশুনানি
দেশীয় প্রযুক্তির মান ও সক্ষমতায় যেন এক নতুন বাংলাদেশকে চিনছে সবাই। জুম, গুগল মিট বা মাইক্রোসফট টিমস নয়, দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতের গণশুনানি সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশীয় অ্যাপ কনভেতে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রথমবারের মতো পুরোপুরি অনলাইনে তাদের ষষ্ঠ বার্ষিক গণশুনানি আয়োজন করে। এ অ্যাপেই কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় জি২০-এর সিডসসার মতো বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে দেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজিত কনভের ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। এছাড়া জাতীয়-আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সভা-সেমিনার, ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কনভেতে।
রাজধানীর বিটিআরসি ভবন থেকে পরিচালিত ওই শুনানিতে কনভে অ্যাপের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করে। যেখানে তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের মান, কলড্রপ, ইন্টারনেটের গতি স্থিতিশীলতা, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস, অবাঞ্ছিত প্রচারণামূলক এসএমএস, ডেটার মূল্য কাঠামো, গ্রাহকসেবার জটিলতা এবং গ্রামীণ শহুরে নেটওয়ার্ক বৈষম্যসহ নানা অভিযোগ ও মতামত তুলে ধরেন।
নীতি-নির্ধারণী ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় প্ল্যাটফর্মে সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ গণশুনানি বড় সরকারি সভা, জনপরামর্শ ও নীতি-সংলাপ নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে আয়োজনের নতুন এক মানদণ্ড। এর ফলে ডেটা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়েছে এবং নাগরিক অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিক। পরিচালনা করেন লিগ্যাল ও লাইসেন্সিং এবং স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক। এতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধি, মোবাইল অপারেটর, আইএসপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা, কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরুর ৩০ মিনিট আগে কনভের লিংক উন্মুক্ত করা হয়। নিবন্ধন করলেই যে কেউ নির্ধারিত সময়ে সেশনে যোগ দিতে পেরেছেন। ফলে রাজধানীমুখী আয়োজনের বাইরে সারাদেশের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাব দেন। সব মন্তব্য ও অভিযোগ ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে বিবেচনার জন্য নথিভুক্ত করা হয়।
বিটিআরসির লিগ্যাল ও লাইসেন্সিং এবং স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক শুনানিতে জানান, দেশীয় প্ল্যাটফর্ম কনভেতে প্রথমবারের মতো পুরোপুরি অনলাইনে জাতীয় এ গণশুনানি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, এবারের গণশুনানিতে অংশগ্রহণের কোনো লিমিট ছিল না। দেশীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কনভেতে এসব অনেক সুবিধা রয়েছে।
আয়োজকরা ও অংশগ্রহণকারীরা জানান, পুরো সেশনজুড়ে কনভের অডিও-ভিডিও সংযোগ ছিল অত্যন্ত স্থিতিশীল। স্পিকার নির্বাচন, কিউ ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোফোন নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা, স্ক্রিন শেয়ারিং ও রেকর্ডিং, সব কার্যক্রম একই প্ল্যাটফর্মে নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। কনভের এ অসাধারণ পারফরম্যান্সে দারুণ সফলভাবে শেষ হয় এ শুনানি।
সিনেসিস আইটি পিএলসি উদ্ভাবিত ‘কনভে’ একটি দেশীয় সার্বভৌম ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম। অডিও ভিডিও, চ্যাট, লগ ও রেকর্ডিংসহ সব তথ্য দেশের ভেতরের নিরাপদ অবকাঠামোয় সংরক্ষণ হয়। প্ল্যাটফর্মটির রয়েছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন, মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, ভূমিকাভিত্তিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল এবং বৃহৎ পরিসরের সভা পরিচালনার সক্ষমতা। একসঙ্গে কয়েক হাজার অংশগ্রহণকারী যুক্ত থাকার সক্ষমতাও রয়েছে এতে।
বুয়েটসহ শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের তৈরি এ প্ল্যাটফর্ম শুধু ভিডিও কনফারেন্সিং টুল নয়; এটি পূর্ণাঙ্গ, নিরাপদ ও স্কেলেবল অফিস কোলাবোরেশন সল্যুশন। দেশীয় উদ্ভাবনে বৈশ্বিক মানের প্রযুক্তি সক্ষমতার বাস্তব প্রমাণ দিয়েছে কনভে।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, কনভের যেসব সক্ষমতা রয়েছে, তা খুব কম পণ্যের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। কনভে শুধু বাংলাদেশের জন্যই উপযোগী নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে পড়ার শক্তি রাখে। এতে জুম ও গুগল মিটের প্রতিযোগী হয়ে ওঠার সক্ষমতাও রয়েছে। প্ল্যাটফর্মটি এরই মধ্যে আফ্রিকা, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এএএইচ/ইএ/এমএস