যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধ
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা
রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টা থেকে তারা এ অবরোধ করেন। এতে সড়কের একটি অংশ যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা অভিমুখী সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে মোবাইল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। তাতে সাড়া না দেওয়ায় স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি) আন্দোলনে নেমেছেন। এর অংশ হিসেবে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দোকান বন্ধ রেখে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচীরা। প্রথমে তারা সড়কে পাশে মানববন্ধন শুরু করেন। পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে হঠাৎ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। দুপুর ২টায়ও ব্যবসায়ীদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে দেখা যায়।
বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার যদি এনইআইআর চালুর আগে তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে, তবে সারাদেশের মোবাইল ব্যবসায়ীরা ঢাকায় জড়ো হয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
আরও পড়ুন
এনইআইআর নিয়ে আলোচনার দাবিসহ কঠোর হুঁশিয়ারি মোবাইল ব্যবসায়ীদের
তারা বলেন, দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসার মার্কেট শেয়ার যাদের ৭০ শতাংশের বেশি, তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে এনইআইআর চালু করুন। আমরা কোনোভাবেই এনইআইআরের বিরুদ্ধে না। তবে এ প্রক্রিয়ার কিছু সংস্কার, ন্যায্য করনীতি প্রণয়ন, একচেটিয়া সিন্ডিকেট বিলোপ এবং মুক্ত বাণিজ্যের স্বার্থে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের কিছু দাবি ও প্রস্তাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের ব্যাখ্যা সরকারকে বলতে চাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ীর কথা না শুনেই একতরফা এনইআইআর চালু করতে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করে বলেন, কোনো প্রকার পূর্ব-পরামর্শ ছাড়াই হঠাৎ এনইআইআর বাস্তবায়নের ঘোষণা বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি করেছে। ফলে দেশের প্রায় ২৫ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং এর সঙ্গে জড়িত ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছি। বর্তমানে আমাদের স্টকে কোটি কোটি টাকার হ্যান্ডসেট রয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিপুল পরিমাণ অবিক্রিত হ্যান্ডসেট বিক্রি করা অসম্ভব। আমাদের দাবি না মেনে গুটি কয়েক ব্যবসায়ীকে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দিলে আমরা পথে বসবো।
এমবিসিবির নেতারা বলেন, এনইআইআরের বর্তমান কাঠামো যদি অপরিবর্তিতভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শুল্ক ৫৭ শতাংশ হোক কিংবা শূন্য শতাংশ, কোনো অবস্থাতেই বৈধ উপায়ে মোবাইল ফোন আমদানি সম্ভব হবে না। কারণ বিটিআরসির আমদানি নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কোনো বিদেশি ব্র্যান্ড যদি স্থানীয়ভাবে তাদের পণ্য সংযোজন করে, তাহলে সেই ব্র্যান্ডের কোনো মডেল অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারবে না।
তাদের অভিযোগ, এ নীতিমালা কার্যত মনোপলি ব্যবসার সুযোগ তৈরি করছে। এর ফলে বাজারে বিদ্যমান প্রতিযোগিতা বিলুপ্ত হবে এবং প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মোবাইল ফোন বাজারের নিয়ন্ত্রণ গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাবে। একই সঙ্গে স্মার্টফোনের দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যাবে এবং সাধারণ ভোক্তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া এতে দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রাও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। তার আগে ২৯ নভেম্বর সারাদেশের সব মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা একই দাবিতে মানববন্ধন করেন।
এএএইচ/ইএ