৪০০ বছর আগের ঘাঘড়া খাঁনবাড়ি জামে মসজিদ
৪০০ বছর ধরে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি, ছবি: জাগো নিউজ
মুঘল আমলে নির্মিত ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদটি শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাঘড়া লস্কর এলাকায় মসজিদটি বাংলা ১২২৮ সনে, যা ইংরেজি সাল গণনা অনুযায়ী ১৬০৮ সালে নির্মিত হয়। কথিত আছে, পালানো খা ও জব্বার খা নামে দুই ভাই কোনো এক রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। কয়েকশ বছর আগে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা ঝিনাইগাতী এসে আশ্রয় নেন। সেখানে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
জানা যায়, মসজিদটির ইটগুলো চারকোণা টালির মতো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ছয়-সাতশ বছর আগে এই ইটের ব্যবহার ছিল। মসজিদের আস্তরণে ঝিনুক চূর্ণ অথবা ঝিনুকের লালার সঙ্গে সুরকি, পাট বা তন্তু জাতীয় আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কৌশলে গ্রিক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। দরজায় কষ্টি পাথরে খোদাই করা আরবি ভাষায় নির্মাণকাল দেওয়া ছিল। ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতে কষ্টিপাথরটি চুরি হয়ে যায়। মসজিদটির বয়স সঠিকভাবে কেউ বলতে না পারলেও কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী থেকে ধারণা করা হয়, এটি বক্সার বিদ্রোহী হিরঙ্গী খানের সময়কালে নির্মাণ করা হতে পারে।
একটি মাত্র বিশাল আকৃতির গম্বুজ এবং এক দরজা বিশিষ্ট মসজিদটি বর্গাকৃতির। দৈর্ঘ ও প্রস্থ ৩০ ফুট। মসজিদের ভেতরে দুটি সুদৃঢ় খিলান আছে। ওপরে একটি গম্বুজকে ঘিরে ছোট-বড় মিনার আছে ১২টি। ভেতরে মেহরাব ও দেওয়ালে বিভিন্ন রঙের ও কারুকার্যে ফুল ও ফুলদানি শোভা পাচ্ছে। দেওয়ালের প্রস্থ বা ব্যাস ৪ ফুট যার গাঁথুনি চুন ও সুরকি দিয়ে করা। খান বংশের ওয়াকফ করা ৫৮ শতাংশ জমি নিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। তবে মূল ভবন ও বারান্দা আছে ১৭ শতাংশ জমির ওপর। বাকি ৪১ শতাংশ জমিতে আছে কবরস্থান।

মসজিদের ভেতর ইমাম ছাড়া তিন কাতারে দশ থেকে বারোজন করে মোট ৩০ থেকে ৩২ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরে বারান্দায় আরও কমপক্ষে ১০০ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। এ নিয়ে সব মিলিয়ে মসজিদে প্রায় দেড়শ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মুসল্লিরা জানান, কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি পরিচর্যার অভাবে বেশ নাজুক অবস্থায় আছে। কয়েক বছর ধরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে মেরামত ও সৌন্দর্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। তবে চুরি হওয়া খোদাইকৃত পাথরটির দাম কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চুরি হওয়া পাথরটি দীর্ঘদিনেও উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা।
মসজিদ কমিটির তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর সকালে ময়মনসিংহের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানাই। ময়মনসিংহ থেকে ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ঝিনাইগাতী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। মসজিদ আমাদের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। চুরি হওয়া পাথরটি দ্রুত উদ্ধারের জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
মসজিদের খতিবের দায়িত্বে থাকা মুফতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণপিপাসুরা এবং মুসল্লিরা মসজিদে আসেন। তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। আমরা মসজিদের কিছু কাজের জন্য সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা চাচ্ছি।’
স্থানীয় আকবর আলী মেম্বার বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের একটি সম্পদ মসজিদটি। কেবল সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে। তাই সরকারের সহযোগিতা চাই।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘মসজিদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এসইউ/জেআইএম