ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

পাহাড়-ঝরনার তীর্থস্থান মিরসরাইয়ে আবাসন সংকট

এম মাঈন উদ্দিন | মিরসরাই (চট্টগ্রাম) | প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একপাশে উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়। অন্যপাশে সাগর আর বহমান নদী। পাহাড়ে আছে অপরূপ অসংখ্য প্রাকৃতিক ঝরনা, কৃত্রিম লেক। পাহাড়ি সৌন্দর্য ঘেরা ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘের এসব স্থান সবাইকে মুগ্ধ করে। আছে আঁকাবাঁকা বেশ কয়েকটি সড়ক। একটি উপজেলার মধ্যে সাগর, নদী, লেক, পাহাড়, ঝরনা, ম্যানগ্রোভ বন আর কোথাও নেই। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় আছে অপরূপ প্রাকৃতিক সব সৌন্দর্য।

একদিকে চোখে পড়ে নীল সমুদ্রের বিশালতা, অন্যদিকে সবুজে মোড়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য। এখান থেকে দেখা যায় জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল। সবুজ সমতল ভূমি যেন এক চিলতে মিরসরাই হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। এ স্থান থেকে সূর্যাস্ত খুব চমৎকারভাবে দেখা যায়।

তবে এখানে পর্যটকের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল আবাসন ব্যবস্থা। নিরাপত্তা সংকটও আছে প্রকট। যা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যটনের বিকাশে। উপজেলাটিতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলতে মনোযোগ নেই সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর।

এখানে ভ্রমণপিপাসু লোকজনের জন্য আছে বিস্ময়ের অফুরন্ত ভান্ডার। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনা, নিবিড় বনে ঢাকা উঁচু পাহাড়ের সারি আর নিরিবিলি সাগরসৈকত।

পাহাড়-ঝরনার তীর্থস্থান মিরসরাইয়ে আবাসন সংকট

সন্ধ্যার পর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প কারখানাগুলোর জ্বলা লাইটগুলো অন্যরকম সৌন্দর্যের আবহ সৃষ্টি করে। মেঘলা দিনে পাহাড় আর মেঘের খেলা, শীতকালে কুয়াশার চাদরে মোড়া গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্য ধরা দেয় এক ফ্রেমে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের অসংখ্য পর্যটক।

মিরসরাইয়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ ১১ বর্গ কিলোমিটারের মহামায়া ইকোপার্ক, আটস্তর বিশিষ্ট খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, সোনাইছড়ি হ্রদ ও ঝরনা, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া হ্রদ, মেলকুম ট্রেইল, সোনাপাহাড়, হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট, মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়ক, করেরহাট-রামগড় সড়ক, করেরহাট ফরেস্ট অফিস ডাক বাংলো, বোয়ালিয়া ঝরনা, হরিণাকুণ্ড ঝরনা, আরশিনগর ফিউচার পার্ক, মুহুরী প্রকল্প, ডোমখালি সৈকত, বসুন্ধরা সৈকত, মিরসরাই জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সুপার ডাইক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার বুক দিয়ে ছুটে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরেই ১৫ বছর পূর্বে মহামায়া হ্রদ আর খৈয়াছড়া ঝরনা ঘিরেই মিরসরাই ভ্রমণ করতেন পর্যটকেরা। তবে সময় বাড়ার সাথে সাথে পর্যটনকেন্দ্রের তালিকায় নতুন নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। এখন পুরো মিরসরাই উপজেলায় প্রায় ২০টি পর্যটনকেন্দ্র আছে। পাল্লা দিয়ে অনেকগুণ বেড়েছে পর্যটক। সে তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা হয়নি বললেই চলে।

মিরসরাইয়ের বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র ও বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, উপজেলায় প্রতি বছর গড়ে পাঁচ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন। আবাসন সংকটের কারণে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই সকালে এসে বিকেলে ফিরে যেতে হয়। আবাসন সংকটের কারণে এখানে রাতযাপন সম্ভব হয় না।

পাহাড়-ঝরনার তীর্থস্থান মিরসরাইয়ে আবাসন সংকট

আরও পড়ুন

মাদারীপুরে কাশফুলের মুগ্ধতায় দর্শনার্থীদের ভিড়
হামহাম মায়াবী এক জলপ্রপাত

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো আর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে পর্যটকের সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হবে। এখানে বাস্তবায়নাধীন জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী ১০ বছরে অন্তত ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা আছে। যার সূত্র ধরেও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক।

উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে কেন্দ্র করে বেসরকারিভাবে দুই-তিনটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এগুলোর মান খুব একটা ভালো নয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও আছে ঘাটতি। চট্টগ্রাম থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশ এখানে দায়িত্ব পেলেও এখনো তাদের কোনো ফাঁড়ি কিংবা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা হয়নি।

খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইফতিখার মাহমুদ চঞ্চল বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন পর্যটন এলাকা দেশে খুব একটা নেই। বিশেষ করে বর্ষায় ঝরনাগুলোতে পর্যটক অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে আবাসন সংকট থাকে বেশি। নিরাপত্তা ও আবাসনের ব্যবস্থা করা গেলে এখানকার পর্যটনশিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করবে।’

মিরসরাইয়ের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোনালী স্বপ্নের প্রতিষ্ঠাতা মঈনুল হোসাইন টিপু বলেন, ‘দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে একসাথে সাগর, নদী, লেক, পাহাড়, ঝরনা, ম্যানগ্রোভ বন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অন্য দেশের সাথে সীমান্ত কোনো উপজেলায় আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু ওই হিসেবে পর্যটনখাতে কোনো পরিকল্পনা বা উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে নিয়ে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

পাহাড়-ঝরনার তীর্থস্থান মিরসরাইয়ে আবাসন সংকট

তিনি বলেন, ‘বন বিভাগ প্রতি বছর লাখ লাখ টাকায় ঝরনাগুলোর ইজারা দিচ্ছে। কিন্তু ঝরনা এলাকায় নিরাপত্তা, দুর্ঘটনারোধ পদক্ষেপ ও অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ে না। ঝরনার ওপর থেকে পড়ে ও পানিতে ডুবে প্রতি বছর অনেক পর্যটক মারা যান।’

চলতি অর্থবছরে মিরসরাই-সীতাকুণ্ডের ৫টি ঝরনা ইজারা পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ আর এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা এস এম হারুন বলেন, ‘আমরা ঝরনাগুলো ইজারা নেওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে সচেতনতামূলক ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে পর্যটকদের উঠতে নিষেধ করা হচ্ছে। লেকে নৌকা ভ্রমণের জন্য লাইফ জ্যাকেট আরও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও অনেক পর্যটক নির্দেশনা না মেনে দুর্ঘটনায় পড়েন। আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটক কমে যাচ্ছে। সরকারিভাবে পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি।’

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার পর্যটনশিল্প নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন বিভাগ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ইজারাদার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্থানীয় গাইড, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। আমরা একসাথে কাজ করছি। পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। এখানকার পর্যটনখাতকে কীভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায় এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবো।’

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন