ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

শীতে ঘুরে আসুন পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি

জেলা প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার | প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রায় ২০০ বছর আগে একজন জমিদার কীভাবে জীবনযাপন করতেন, তার বাস্তব চিত্র দেখা যায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়িতে। বাড়িটি পৃত্থিমপাশা নবাববাড়ি নামে বেশি পরিচিত। জমিদারি আমলের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক এবং অপূর্ব স্থাপনার নাম পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি।

জমিদারবাড়িটি এখনো সাদা পাথরের মতো রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হবে, হয়তো ২০-২৫ বছর আগে কেউ এটি তৈরি করেছেন। বাড়িটি দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি প্রায় ২০০ বছর আগের জমিদারবাড়ি। প্রায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে জমিদারবাড়িটি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।

বাড়ির ভেতরে আছে বিশাল দিঘি, কারুকাজ করা আসবাবপত্র, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বৈঠকখানা ও ইমামবাড়া। জমিদারবাড়ির সদস্যরা হলেন শিয়া মতাবলম্বী। নবাব আলী আমজদ খান ইমামবাড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে শিয়া মতাবলম্বীরা প্রতি বছর মহররমের দিন শোক মিছিল, কারবালার ইতিহাস বয়ান করেন। মসজিদে প্রতি শুক্রবার দুটি জুমার নামাজ আদায় হয়। প্রথম জামাতে শিয়া মতাবলম্বীরা নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় জামাতে সুন্নি মতাবলম্বীরা নামাজ পড়েন।

জমিদারবাড়ি

বিশাল বাড়িটি দেখাশোনা করেন নবাব আলী আমজদ খানের উত্তরসুরীরা। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক রাখা আছে। বাড়ির ভেতর দিঘির একপাশে আছে জমিদারদের কবর। ১৯৫১ সালে ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভী পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দীন। এমনকি ত্রিপুরার মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরসহ বহু ইংরেজ ভ্রমণ করেছেন বাড়িটি। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান। এখানে প্রতি বছর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক ছুটে আসেন। বিশেষ করে মহররমের ১০ তারিখ আশুরার দিনে হাজার লোকের সমাগম ঘটে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪৯৯ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের সময় ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন সাকী সালামত খান। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেই তাঁর ছেলে ইসমাইল খান লোদী আসেন পৃত্থিমপাশায়। ইসমাইল খান ছিলেন উড়িষ্যার গভর্নর। ইসমাইল খানের ছেলে শামসুদ্দিন খান। শামসুদ্দিন খানের ছেলে রবী খান। যার নামে ১৭৫৬ সালে রবিরবাজার নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রবী খানের ছেলে আলী খান। আলী খানের ছেলে গৌছ আলী খান।

আরও পড়ুন
মসজিদের নান্দনিক নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের 
জৌলুস ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র 

তিনি ১৭৯২ সালে ইংরেজ শাসকদের পক্ষ হয়ে নওগাঁ কুকিদের বিদ্রোহ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ইংরেজ সরকার গৌছ আলী খানকে উপহার হিসেবে ১ হাজার ২০০ হাল বা ১৪ হাজার ৪০০ বিঘা জমি দান করেন। গৌছ আলী খানের ছেলে আলী আহমদ খান সিলেটের কাজী (বিচারক) ছিলেন। তাঁর সময়ে জমিদারির রাজস্ব বেড়ে যায়। তিনি ব্রিটিশ আনুকূল্য লাভ করেন। তিনি চাঁদনীঘাট এবং সুরমা নদীর তীরে সিলেট শহরের গোড়াপত্তন করেন।

জমিদারবাড়ি

নবাব আলী আহমদ খানের ছেলে নবাব আলী আমজাদ খান তখনকার বৃহত্তর সিলেটের সবচেয়ে স্বনামধন্য এবং প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। সিলেটের বিখ্যাত সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি তাঁর সমাজসেবার অন্যতম দৃষ্টান্ত। জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আলী আমজাদ খান মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেন। আলী আমজাদ খানের দুই ছেলে আলী হায়দার খান ও আলী আজগর খান। আলী আজগর খানের ছেলে আলী ইয়াওয়ার খান।

১৮৭৪ সালে ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না। সেসময় সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার (উত্তর সুরমা) কীন ব্রিজের ডানপাশে সুরমা নদীর তীরে ঐতিহাসিক ঘড়িঘর নির্মাণ করেন জমিদার আলী আহমদ খান। তাঁর ছেলে আলী আমজাদের নামে নামকরণ করেন। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির ঘড়িঘরটি তখন থেকেই দেশ-বিদেশে ‘আলী আমজাদের ঘড়ি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

আলী আমজাদ খানের ছেলে নবাব আলী হায়দার খান ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। পৃত্থিমপাশা জমিদার পরিবারের সন্তান নবাব আলী সারওয়ার খান, নবাব আলী আব্বাস খানরাও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানের উত্তরসুরীরা সমাজের উন্নয়নের জন্য সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

জমিদারবাড়ি

যেভাবে যাবেন
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ট্রেনযোগে কুলাউড়া রেলস্টেশন। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় সহজে পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি যাওয়া যায়। এ ছাড়া বাসে করে দেশের যে কোনো স্থান থেকে মৌলভীবাজার শহরে নেমে লোকাল বাস বা সিএনজি অটোরিকশায় করে যাওয়া যায়।

এসইউ

আরও পড়ুন