শিশু অধিকার সুরক্ষায় পাঠকের সংবাদবোধ সৃষ্টির উদ্যোগ
সংবাদ মূলত পাঠকদের কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়ে থাকে এবং পাঠকই হচ্ছে সংবাদের ভাল মন্দ মূল্যায়ন করার মূল বিচারক। পাঠক/শ্রোতা যদি সংবাদ মূল্যায়ন করতে পারে অর্থাৎ সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এবং নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ড বিবেচনা করে করা হয়েছে কিনা তাহলে তারা এ ব্যাপারে মতামত প্রদান করতে পারবে।
এজন্য পাঠক/শ্রোতাদের মধ্যে সংবাদবোধ থাকা এবং নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারাটা অত্যন্ত জরুরি। তাই পাঠক/শ্রোতাদের বিশেষ করে কিশোর/তরুণ পাঠকদের মধ্যে সংবাদজ্ঞান থাকলে তারা শিশুদের জন্য এবং শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে নীতি-নৈতিকতা মেনে সংবাদ প্রচার/প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এই উদ্দেশ্য নিয়েই সম্প্রতি এমআরডিআই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতায় এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহায়তায় ‘Exploring young Mind : News literacy and ethics in child reporting’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে কিশোর/তরুণ পাঠকদের সংবাদ সম্পর্কে নিজেদের বোধগম্যতা বাড়ানো বা সংবাদ সম্পর্কে সচেতন করা। বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) ও এমআরডিআই-এর এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন সহযোগী।
শিশুদের জন্য এবং শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা, তাদের প্রত্যাশা এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ইউনিসেফ এবং এমআরডিআই মনে করছে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাঠক/শ্রোতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে তাদের সংবাদ বোধ বাড়ানো প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বহুদিন ধরে নীতি-নৈতিকতা মেনে শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রচার/প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ করছি। যদি পাঠক/শ্রোতা বুঝতে পারে যে শিশু সংক্রান্ত বা শিশুদের জন্য এই প্রতিবেদনটিতে নীতি নৈতিকতার লঙ্ঘন হয়েছে তাহলে আমি মনে করি যে শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মানের উন্নতি হবে এবং নীতি নৈতিকতার লঙ্ঘন হ্রাস পাবে।
তিনি আরো বলেন, কিশোর বা তরুণরাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কর্ণধার। এই তরুণরাই হচ্ছে বর্তমান সময়ে পাঠকদের বড় একটা অংশ। তাই সংবাদ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান বাড়ানো এবং তাদের মধ্যে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করতে পারলেই সমাজে এর টেকসই প্রভাব বিরাজ করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, সংবাদবোধ ধারণাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয় এটা সারা বিশ্বেই একটি নতুন ধারণা। যদি পাঠক/শ্রোতা তথ্য এবং সংবাদের যৌক্তিক ও নৈতিক দিক উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে তারা সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জবাবদিহিতা দাবি করতে পারবেন। আমরা খুব আনন্দিত এ ধরনের একটি উদ্যোগের অংশ হতে পেরে যা পাঠকদের মধ্যে এবং মিডিয়াতে শিশুদের অধিকার রক্ষায় ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, পাঠকদের মধ্যে সংবাদ বোধ বাড়াতে এমআরডিআই কাজ করছে যাতে পাঠক/শ্রোতা সংবাদে তথ্যের যৌক্তিকতা বুঝতে পারে এবং শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে নীতি নৈতিকতার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তা বুঝতে পারেন।
বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের (বিডিএফ) সভাপতি সঞ্জীব সাহা বলেন, সচেতন পাঠক হিসেবে নিজেদের মধ্যে সংবাদবোধ বাড়াতে বিতর্ক হচ্ছে একটি কার্যকর উপায়। এটি যেকোন বিষয়ে সমালোচনামূলক চিন্তা করার, যোগাযোগ এবং গবেষণা পদ্ধতি বাড়ানোর এক অনন্য উপায়। তাই আমাদের এই উদ্যোগ কিশোর/তরুণ মনে শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে নীতি নৈতিকতার লঙ্ঘনের চিত্র বুঝতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি। এই বোধ থেকেই বিতর্কের এই যুক্তিবাদী ও মুক্তমনা মানুষগুলো গণমাধ্যমের নীতি নৈতিকতা লঙ্ঘনের চিত্র নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারবেন এবং সমাজে সচেতনতা তৈরি করতে পারবেন।
এই ক্যাম্পেইনের অধীনে ১২ অঞ্চলে দুই দিন ব্যাপী এবং ঢাকায় চূড়ান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এ লক্ষ্যে সারাদেশের মোট ১৯৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ বিতার্কিকের অংশগ্রহণে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। প্রতি অঞ্চলে ১৬টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে সকল বিতার্কিকদের অংশগ্রহণে নীতি- নৈতিকতা মেনে শিশুদের জন্য ও শিশু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সংবাদবোধ এবং বিতর্কের বিষয় নিয়ে ব্রিফিং সেশনের আয়োজন করা হবে। - বিজ্ঞপ্তি
এসএইচএস/এমএস