সাহিত্য

আমিরুল বাসারের একগুচ্ছ কবিতা

হৃদয়ে তোমার ছায়া পড়ে(কবি, কথাশিল্পী সিরাজুল ইসলাম স্মরণে)

আজকের এ অনুষ্ঠান কোনো শোকসভা নয়স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানও নয় এটাআমার এক ভাই মারা গিয়েছেন। তিনি কবিতা লিখতেন, তিনি গল্প লিখতেন, জীবন ও সাহিত্যের অন্তঃস্থল গভীরে তার পদচারণা ছিল। তিনি কথা বলতেন,হাসতেন আর মানুষকে ভালোবাসতেন।আমরা তাঁকে কবি বলে জানতাম, একজন ভালো মানুষ বলে জানতাম।আমাদের কবি, দীর্ঘ রোগ-শোক রোগ-ভোগ করেঅবশেষে না ফেরার দেশে ফিরে গিয়েছেন। আর আমরা ক’জন সতীর্থ সেই বেদনায় কাঁদছি, আর কিছু লোক লম্পট প্রবৃত্তি চরিতার্থ করছি।

আপনি চলে গিয়ে ভালোই করেছেন সিরাজ ভাই।রোগ যন্ত্রণা, মানুষ যন্ত্রণা আর ডায়ালাইসিসের কষ্টআপনাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না।

সিরাজ ভাই, সাতক্ষীরার প্রধান সড়ক, সড়কের গলি, চায়ের দোকান আর তুহিনের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে আপনাকে আর দেখা যাবে না কদাচিত। মাথায় ধূসর রঙের ক্যাপ আর বই কিংবা কোনো পত্রিকা হাতে নিয়েহেঁটে যেতে দেখবো না আর কখনো।

আপনার প্রিয় ক্যামেরাটা আজ কেমন আছে সিরাজ ভাই? ক্যামেরার বেলটা কাঁধে ঝুলিয়ে আপনি আর আসবেন না—আমার কবিতার অনুষ্ঠানে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েমৃত্যুমুখি যন্ত্রণা আড়াল করে কে আর কথা বলবে আমার সাথে? মৃত্যুর ভয়াল গ্রাস আর কত স্বপ্ন লুটে নেবে জীবন থেকে?

আপনার ফোনের জন্য আজও অপেক্ষা করে থাকে আমার ক্লান্ত সময়। আপনি বলবেন, বাবু, আমি কাল ঢাকায় আসছি, সন্ধ্যায় তোমার অফিসে চলে আসবো আমি। আমি আজও পথ চেয়ে বসে থাকি, আপনি কখন আসবেন? সময় যে ফুরিয়ে যায়—আবৃত্তি উৎসবের বিষয়টা এখনো যে চূড়ান্ত হয়নি।

সিরাজ ভাই, আপনি নেই- এ কথা আমি মানি না।বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের কলতানে আপনি আছেন,আপনি জেগে আছেন এ সবুজ অরণ্যভূমে—সাতক্ষীরার বাতাস জানে সে কথা।স্রোতমুখি প্রাণসায়রের জল জানে, কতটা ভালোবেসেছিলেন—আপনি কবিতাকে। আর জানে এ শহরের সতীর্থ মানুষ। আপনি তো কবি। কবিদের মৃত্যু হয় না।কবিতার অক্ষরে অক্ষরে আপনি জেগে আছেন সর্বদাই।

তাই বলি—হৃদয়ে তোমার ছায়া পড়ে নিত্যপূণ্যভূমি,নয়নের নক্ষত্র হয়ে জ্বলে আছো তুমি।

০২.০৭.২০২৫, ঢাকা

****

মানুষ বাঁচুক

জেগে ওঠো ফিলিস্তিনমাতৃভূমিরক্ষাকরতেআজ এসেছে তোমার দিন।

আর কতটা রক্ত ঝরলেমুক্তহবেফিলিস্তিন?

আর কতটা রক্ত ঝরলেবন্ধহবেশব মিছিল?এমনি করে আর কত?

বিশ্বপনায়সাম্রাজ্যবাদরুখতে হবে দিন এসেছেমানুষবাঁচুকজিন্দাবাদ।

২১.১০.২০২৩

****

চোখ

পাখি ডাকা ভোরশিউলির ঘোরসবুজের ঘাস,শিশিরের জলপায়ে পায়ে চলযেন বারোমাস।

নদী বয়ে যায়দুকূলের বায়বাঁশিতে সুরফসলের মাঠখেয়া বাঁধা ঘাটকে যায় সুদূর।

সুমধুর গাঁয়কে বাঁশি বাজায়শোনে কত লোকনিঝুম দুপুরকোকিলের সুররাত জাগা চোখ।

১৮.১১.২০২২

*****

জাগি রাত্রিদিন

এখানে বসার জায়গা নেই, যা আছে তা অপাত্রএখানে ঘুমানোর কোনো রাত্রি নেইযা আছে, তা ঘনকালো অন্ধকার।তাই, এমনিভাবে জেগে আছি।এখানে সূর্য ওঠে না, ভোর হয় না, পাখি ডাকে নাএখানে এমনিভাবে দুপুর আসে, সন্ধ্যা নামে।রাত আসে সঙ্গোপনে।

রাত আসে সঙ্গোপনে,দিন আসে সঙ্গোপনে দীনের আলোহীন।এখানে এমনিভাবে জেগে আছিজাগি রাত্রিদিন।

২৯.১১.২০২৪

*****

অপেক্ষা

একঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছিএটা এমন কিছুই নয়একঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকাসফল যেন হয়।

বারো বছর দাঁড়িয়ে ছিলচন্ডিদাস কবিসে কথা কি ভুলে গেছেপ্রেমের রজকিনী।

২৯.১১.২০২৪

****

আগামী সকাল

আমাদের গল্পগুলো আলমারির মধ্যে বন্দি করে রেখে বাতাসে ভেসে বেড়ানো শব্দ সাঁতার কাটে,সবুজ ঘাসের বুকে হেঁটে লাফিয়ে চলা খরগোশটা ক্রমশক্লান্ত হয়ে যায় তবু আলো ছড়ায় সোনালি দুপুর।তোমাদের নদীর পাড়ে জলঘেষে অসংখ্য দাঁড়িয়ে থাকেবাতাসে দুলতে থাকে হেলে পড়া কাশফুল, মাটির শরীর, ক’ফোটা ক্লান্ত নিয়ে অলস পথিকপাড়ভাঙা শ্রোতের শব্দে সূয্যি ডোবে পশ্চিমে। আমাদের রাত্রিযাপন অন্ধকারের হরিণচোখেজোছনার আলোগুলো দূরে বসে বসে দেখে অপলক,নিঃশব্দের কাতরতায় ঘুম থেকে জেগে উঠি একাক্রমশ এগিয়ে আসে সন্তর্পণে আগামী সকাল।

এসইউ/