সোশ্যাল মিডিয়া

আটকে গিয়েছিলাম দ্বীপ ভূখণ্ডে!

এলিজা বিনতে এলাহী

আটকে গিয়েছিলাম দ্বীপ ভূখণ্ডে! সাগর পাড়ে পরিকল্পনা সব সময় ঠিক থাকে না। সারাদিন সন্দ্বীপে কাজ করে বিকেল সাড়ে চারটায় ঘাটে এসে দেখি টিকিট বিক্রি বন্ধ।

একমাত্র পথ আছে সার্ভিস বোট। সকালে ফেরি আসেনি আবহাওয়া খারাপজনিত কারণে। এসেছি স্পিড বোটে। সাগর উত্তাল তাই স্পিড বোট আর যাবে না। ঘাটে অপেক্ষা করছে প্রায় ২৫০-৩০০ মানুষ। জানলাম কিছুক্ষণ আগেই একটি সার্ভিস বোট গেছে। সেটি ফিরলে আবার হয়তো যাওয়া যাবে।

সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সার্ভিস বোটের টিকিট দেওয়া শুরু হলো। ৭টায় বোটে গিয়ে বসলাম। ভাবলাম, যাক বাঁচা গেল আর রাতযাপন করতে হবে না। মিনিট দশেক পর শুনি বোট যাবে না। একেক জনের কাছে একেক কথা শুনি। আরও দশ মিনিট পর দেখলাম বোট প্রায় খালি হতে শুরু করেছে। আমরাও বোট থেকে নামলাম।

এবার আবাসন খোঁজার পালা। আচমকা কারো নাম মাথায় আসছে না। কাকে ফোন দেবো বুঝতেও পারছি না। সারাদিন খাওয়া-দাওয়া করিনি, সময় বাঁচানোর জন্য। সন্দ্বীপের পথ খুব বন্ধুর। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বেশ সময় লাগে। আবার বাহনের অপ্রতুলতাও আছে। শিবের হাটে বিনয় সাহা দোকানের রসগোল্লা আর মহিষের দধি ছাড়া কিছুই খাইনি। শেষ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা চেষ্টা করে আবাসনের ব্যবস্থা হলো।

আরও পড়ুন প্রথম পিরিয়ডেই হারিয়ে গেলো একটি জীবন  গোপাল সাঁওতালের জন্য মানবিক আবেদন 

বিপদ কি একটা! আজ ফিরে যাবো বলে খুব বেশি ক্যাশ সাথে নেই। বিকাশেও টাকা ফুরিয়েছে। রবির মোবাইল নেটওয়ার্ক সন্দ্বীপে ভালো না। এটিএমে গিয়ে দেখি সেখানেও টাকা নেই। এখানকার এটিএম মেশিন আমার চাইতেও গরিব। কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ছাড়া রাতে থাকার মতো কাপড় নেই সঙ্গে। আবাসন, খাওয়া-দাওয়া আর মুদ্রার ব্যবস্থা করেছি শেষ অবধি।

সকাল সাড়ে ছয়টায় ঘাটে এসে দেখি স্পিড বোট আজও ছাড়বে না। সার্ভিস বোটেই যেতে হবে। জেটি থেকে ছোট নাও ৩০-৩৫ জন করে নিয়ে যাবে অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা সার্ভিস বোটে। তারপর যাত্রা।

অবশেষে যাত্রা করলাম। দুলতে দুলতে সার্ভিস বোট চলছে। পাশে দু’চারজন বমি করছে। আমি কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো বসে। সামনে বিশাল সমুদ্র দেখছি আর ভাবছি, মানুষ প্রকৃতির কাছে কত অসহায়। অথচ আমাদের দম্ভ প্রকৃতির চাইতেও বেশি।

দেড় ঘণ্টা পর কুমিরা ঘাটে এসে নামলাম। আরও গল্প আছে। আপাতত কাজের কথা চিন্তা করছি। কাজের কিছু ঝামেলা হলো। পরিকল্পনা মাফিক এগোয়নি কাজ। ডাঙায় থাকা মানুষের জন্য এটি গল্প। সাগর পাড়ে এটি তো নিয়মিত অবস্থা।

(১৯ আগস্ট ২০২৫, সকাল ১১টা ২৬ মিনিট)

এসইউ/জিকেএস