লেখক ও কার্টুনিস্ট ওবায়দুর রহমানের প্রথম ইংরেজি ভাষার কার্টুন সংকলন ‘জিঙ্গার টুঞ্জ: ডার্ক এন’ টুইস্টেড’ প্রকাশিত হয়েছে। স্লিক পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত বইটি মূলত একগুচ্ছ গাঢ় ও ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনের সংকলন। যা প্রচলিত হাস্যরসের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
বইটি কার্টুন জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেছে। ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা ও গা-ছমছমে রসবোধে ভরপুর বইটি কেবল হাস্যরস সমৃদ্ধ কার্টুন বই নয় বরং সমকালীন ব্যঙ্গচিত্র সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বইটিতে চিত্রিত কার্টুনিস্টের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার শিল্পসম্মত অভিব্যক্তির সংকলনসমূহ পাঠককে হাসির পাশাপাশি গভীর চিন্তার খোরাক জোগাবে।
প্রতিটি কার্টুনে ফুটে উঠেছে লেখকের গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি ও চতুর রসবোধ। যা মূলত সমসাময়িক সমাজ, প্রযুক্তি, রাজনীতি, শিল্প ও ব্যক্তিগত অস্তিত্ববাদী প্রশ্নকে কেন্দ্র করে গঠিত। কার্টুনগুলোতে হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে চিন্তার খোরাক এবং কখনো কখনো তীব্র সামাজিক ব্যঙ্গ।
এর প্রধান আকর্ষণ বিবিধ বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য। ওবায়দুর রহমান তার কার্টুনে দৈনন্দিন জীবনের হাস্যকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তবে তা ‘অন্ধকার ও বাঁকা’ দৃষ্টিকোণ থেকে। এর মধ্যে এলিয়েন, ইউএফও, দ্বীপের গল্প, এমনকি অস্তিত্ববাদী সংকটে ভোগা ভূতের মতো ইন্টারেস্টিং বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া, আধুনিক শিল্প, আত্মসমালোচনামূলক মানবমন—সব কিছুই এসেছে তীক্ষ্ণ, ব্যতিক্রম এবং দর্শনধর্মী দৃষ্টিকোণ থেকে।
ওবায়দুর রহমান শুধু একজন কার্টুনিস্ট নন, তিনি একজন চিত্রশিল্পীও। বইটির প্রচ্ছদ এবং পেছনের কভার নিজেই এঁকেছেন। যা তার শৈল্পিক দক্ষতার পরিচয় বহন করে। প্রতিটি কার্টুনই লেখকের পর্যবেক্ষণের গভীরতা এবং কল্পনার অসাধারণ সমন্বয়। কার্টুনগুলোর প্রতিটি প্যানেলে সূক্ষ্ম হাস্যরস এবং ব্যঙ্গাত্মক উপাদান লুকিয়ে আছে, যা পাঠককে বারবার ভাবতে বাধ্য করে। প্রতিটি কার্টুন সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি নীরব আলোচনা তৈরি করে।
আরও পড়ুনপ্রকাশিত হলো অলোক আচার্যের ‘চৈত্রের আকাশ নিঃসঙ্গ ছিল’অ্যামাজনে শান্তর কাব্যগ্রন্থ ‘ডিভিনিটি অ্যান্ড হেমলক’
লেখক মনে করেন, ‘হাসি শুধু বিনোদন নয়, এটি প্রতিবাদের ভাষা, চিন্তার হাতিয়ার। কার্টুনগুলোর ভাষা সম্পূর্ণ ইংরেজি, যা এটিকে বিশ্বব্যাপী পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি চমৎকার প্রচেষ্টা। উদ্যোগটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের শিল্পীরা কেবল দেশীয় দর্শকদের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শন করতে সক্ষম।’
আমেরিকান কৌতুক ও ব্যঙ্গচিত্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘হিউমার টাইমস’ বইটি সম্পর্কে বলেছে, ‘এটি পুরোনো দিনের ম্যাড ম্যাগাজিনের মতো, যেখানে হাসির মাঝে থাকে চিন্তার ঝলক।’
বইটির শুরুতে ওবায়দুর রহমান বলেছেন, ‘হাসি মানবাত্মার জন্য ঠিক তেমনটাই, যেমনটা পানি জীবনধারণের জন্য।’ উক্তিটি তার কাজের মূল দর্শনকে তুলে ধরে। তিনি বিশ্বাস করেন, হাসি কেবল একটি বিনোদন মাধ্যম নয় বরং মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ। কার্টুনগুলো এ বিশ্বাসের প্রতিফলন, যা পাঠকের মনে আনন্দ এবং জীবনের জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে।
বইটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কার্টুন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এটি কেবল বিনোদন নয় বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মন্তব্য। পাঠকেরা বইটিকে পুনরায় পাঠযোগ্য সংকলন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা একবার পড়লে হাসি আসে, বারবার পড়লে চিন্তা জন্মায়। কার্টুনপ্রেমীদের পাশাপাশি সাহিত্য, সমাজচিন্তা এবং ব্যঙ্গরসের অনুরাগীদের কাছেও এটি দারুণভাবে গ্রহণযোগ্য হবে।
এসইউ/এমএস