দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৪ বছর বয়সে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ৫৫ বছর পর মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার (সাবেক কালকিনি) কাজী বাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের পৈতৃক ভিটায় আসেন। ২০০৩ সালে তিনি প্রথম এসেছিলেন। শেষবার এসেছিলেন ২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর। তাঁর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে জন্মভিটায় ৩ দিনের জন্য এসেছিলেন কবি।
সেই সময়ে কবির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাদারীপুরের কবি ও সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী। অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি এবার জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
আকাশী: আপনার সাহিত্যচর্চায় কার প্রভাব বেশি বলে মনে করেন?সুনীল: জীবনের প্রথম দিনটাই বাবা-মায়ের পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবটা পড়েছে সবচেয়ে বেশি। মা খুব বই পড়তেন। সেই প্রভাবটাও পড়েছে আমার ওপর।
আকাশী: শৈশবে যে বিষয়গুলো মনের মধ্যে দাগ কেটেছে—সুনীল: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এবং যুদ্ধের পরে অভাব, মারামারি, নিরীহ লোকদের মেরে ফেলা, বাড়ি-ঘর ধ্বংস, রাজনীতি নিয়ে নোংরা খেলা—সব মিলিযে দেশ বিভাগের যে বিচ্ছেদ, এসব আমার মনের মধ্যে আজও দাগ কেটে আছে। সেই সময়টা খুব অসহায় মনে হয়েছিল।
আকাশী: জীবনের প্রথম লেখালেখির অনুপ্রেরণা আসে কোথা থেকে?সুনীল: ওই যে বলছিলাম, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। মূলত তখন থেকেই সুন্দর একটা পৃথিবীর লক্ষ্যে লেখার শুরুটা।
আকাশী: আপনার প্রিয় বই কোনটি?সুনীল: প্রিয় বই বলতে বুঝি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান বইটি আমার খুব ভালো লাগে। বইটি আমার এত প্রিয় যে, কখনও যদি আমাকে নির্বাসন দেওয়া হয়, আমি এই বইটি সাথে রাখবো।
আরও পড়ুনরুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ: প্রেম ও প্রতিবাদের কবি সৃষ্টিতে বেঁচে থাকবেন সবার মাঝে
আকাশী: আপনার প্রিয় গান কোনটি?সুনীল: অনেক গান প্রিয়, তার মধ্যে একটি বলি—‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...’।
আকাশী: আপনার প্রিয় ছবি (সিনেমা) কোনটি?সুনীল: ছবির মধ্যে প্রিয় সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালির পরের পাঠ—অপরাজিতা।
আকাশী: আপনার দৃষ্টিতে সমাজে বড় বাধা আসলে কী?সুনীল: ছোটবেলা থেকে পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। তাই সব সময় আমি আমার মতো করে চলেছি। আমাদের সমাজে ধর্মটা হচ্ছে বড় বাধা। তাই ধর্মকে কখনও রাস্তায় আনতে নেই।
আকাশী: বিয়ে-সংসার নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কেমন?সুনীল: ভেবেছিলাম জীবনে বিয়ে করবো না। কিন্তু একটি মেয়ের সাথে গভীর আলাপ হয়। তাই তাকেই বিয়ে করে ফেললাম।
আকাশী: জন্মভিটার মানুষদের জন্য কী ভাবছেন?সুনীল: সবার ঊর্ধ্বে মানুষ। তাই মানুষকে ভালোবাসবো এটাই আমার জীবনদর্শন। আমার এই জন্মভিটায় সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড হলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।
এসইউ/জিকেএস