একা ফরজ নামাজ আদায়কারী যদি মুসাফির হয় এবং বিজন কোনো জায়গায় নামাজ আদায় করে, তাহলে তার কর্তব্য হলো ইকামত দিয়ে নামাজ আদায় করা। তার জন্য ইকামত ছাড়া ফরজ নামাজ আদায় করা মাকরুহ। যদি একা ফরজ নামাজ আদায়কারী মুকিম হয় এবং ঘরে নামাজ পড়ে, তাহলে তার জন্য ইকামত দেওয়া উত্তম। তবে তার জন্য ইকামত ছাড়া ফরজ নামাজ আদায় করা মাকরুহ নয়। মুকিম মসজিদে একা ফরজ নামাজ আদায় করলে ইকামত না দেওয়াই উত্তম।
আর ফরজ নামাজের জামাতের আগে ইকামত দেওয়া সুন্নতে মুআক্কাদা, ইকামত না দেওয়া মাকরূহ।
জামাতে বা একা ফরজ নামাজে ইকামত যেহেতু ফরজ-ওয়াজিব নয়, তাই ভুল করে বা অন্য কোনো কারণে ইকামত ছাড়া জামাতে বা একা ফরজ নামাজ আদায় করলেও নামাজ শুদ্ধ হবে। পুনরায় ওই নামাজ আদায় করতে হবে না।
জামাতে ইকামতের সময় মুক্তাদিরা কী করবেন?নামাজের ইকামত শুরু হলে মুক্তাদীদের করণীয় হলো দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতে থাকা যেন ইকামত শেষ হতে হতে জামাতের কাতার সোজা হয়ে যায় এবং ইকামত শেষ হলে ইমাম নামাজ শুরু করতে পারেন। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, বেলাল (রা.) আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসতে দেখে ইকামত শুরু করতেন। মুক্তাদিরা কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার আগেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। (সহিহ মুসলিম: ১/২২০)
আজানের জবাব দেওয়া যেমন সুন্নত, ইকামতের জবাব দেওয়াও সুন্নত। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন আপনারা নামাজের দিকে আহ্বান শুনবেন, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বলবেন। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৩)
এই হাদিসে ‘নামাজের আহ্বান’ বলে ব্যাপকভাবে আজান ও ইকামত উভয়টিই বোঝানো হয়েছে।
ইকামতের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি হলো, তাকবির, শাহাদাত ইত্যাদি সব বাক্যের ক্ষেত্রে মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বলে যাওয়া। শুধু ‘হাইয়া আলাস-সালাহ’ ও হাইয়া আলাল ফালাহ’ শুনে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলা এবং ‘কাদ কামাতিস-সালাহ’ শুনে ‘আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’ বলা।
আবু উমামাহ (রা.) বলেন, একবার বিলাল (রা.) ইকামত দিতে শুরু করলেন। তিনি যখন ‘কাদ কামাতিস সালাহ’ (নামাজ শুরু হচ্ছে) বললেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আকামাহা-ল্লাহু ওয়া আদামাহা’ (আল্লাহ নামাজকে প্রতিষ্ঠিত ও চিরস্থায়ী করুন)। বাকি সব বাক্যের জবাবে ওমরের (রা.) বর্ণিত হাদিসে আজানের উত্তরে যেমন উল্লেখ রয়েছে তেমনই বললেন। (সুনানে আবু দাউদ)
এ হাদিসে হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত আজানের বিস্তারিত জবাব সম্বলিত হাদিসটির কথা বলা হচ্ছে। ওমরের (রা.) বর্ণিত হাদিসটিতে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ যদি মুয়াজ্জিনের ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’-এর জাওয়াবে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে, ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর জওয়াবে ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’-এর জওয়াবে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, ‘হাইয়্যা আলাস্-সলাহ’-এর জওয়াবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে, ‘হাইয়্যা আলাল-ফালাহ’-এর জওয়াবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’-এর জওয়াবে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ’-এর জওয়াবে ‘লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ’ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ)
ইকামতে যা বলা হয়ধারাবাহিকভাবে ইকামতের বাক্যসমূহ এবং সেগুলোর অর্থ এখানে উল্লেখ করা হলো:
আল্লাহু আকবার অর্থাৎ আল্লাহ মহান (৪ বার)
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই (২ বার)
আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল (২ বার)
হাইয়া আল্লাস সালাহ অর্থাৎ নামাজের দিকে আসুন (২ বার)
হাইয়া আলাল ফালাহ অর্থাৎ কল্যাণের দিকে আসুন (২ বার)
কাদ কামাতিস সালাহ অর্থাৎ নামাজ শুরু হচ্ছে (২ বার)
আল্লাহু আকবার অর্থাৎ আল্লাহ মহান (২ বার)
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই (১ বার)
ওএফএফ/এমএস