অর্থনীতি

‘উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে’ জায়গা ইজারা দিলো বন্দর

• খাদ্যশস্য রাখার মিথ্যা তথ্যে জায়গাটি বরাদ্দের আবেদন করেন লিজগ্রহীতা• অংশীদারের অন্য ব্যক্তি সুতা ব্যবসায়ীকে জায়গাটি পুরোপুরি দিয়ে দেন মূল লিজগ্রহীতা

মাত্র ২৪ শতক জায়গা অস্থায়ীভাবে ইজারা দিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে ‘নির্দেশনা দিয়েছেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন’। কাগজে-কলমে রয়েছে এ তথ্য। অথচ উপদেষ্টা বলছেন, মৌখিক বা লিখিত কোনো নির্দেশনাই তিনি দেননি। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, উপদেষ্টার নির্দেশনার বিষয়টি ‘ক্লারিক্যাল মিস্টেক’। যদিও মিথ্যা তথ্যে আবেদনের এ ইজারা থেমে থাকেনি।

একই জায়গা এর আগে মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিবও লিজ দেওয়ার ব্যাপারে বন্দরকে চিঠি দেন। ‘উপদেষ্টার নির্দেশনা’ ও উপসচিবের চিঠির আলোকে ইতোমধ্যে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন চাক্তাই আছদগঞ্জ এলাকার সুজাকাঠগড় মৌজার ওই ২৪ শতাংশ জমি ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী ইজারা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের গত ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখের বোর্ড সভার এজেন্ডা (নথি নং-১৮.১৩.০০০০.৫০০.৩৫.০২২.২৫) পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এজেন্ডাটি প্রস্তুত করেন বন্দরের সহকারী ব্যবস্থাপক (ভূমি) মো. রায়হান উদ্দিন। অভিযোগ উঠেছে, তার (রায়হান) যোগসাজশে বন্দরের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এ জায়গা লিজ দেওয়া হয়। অস্থায়ীভাবে ছয় মাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও বছরের পর বছর নবায়ন করা হয় এসব চুক্তি। এমন নজির বন্দরের প্রায় সব অস্থায়ী বরাদ্দের ক্ষেত্রেই।

ওই জায়গা এখন আমার অধীনে নেই। ওটি মোস্তাফিজুর রহমানের অধীনে চলে গেছে। আমার টাকা-পয়সা নাই তো, তাই বন্দরে আবেদন করে ওনাকে (মোস্তাফিজ) দিয়ে দিয়েছি।- লিজগ্রহীতা সুব্রত মহাজন

ওই এজেন্ডা পর্যালোচনায় সভার সিদ্ধান্ত নম্বর-১৯৬৭০ অনুসারে সাতটি শর্তে সুজাকাঠগড় মৌজার বিএস খতিয়ান নম্বর-০৩, বিএস দাগ নম্বর-৫৫১ (অংশ) এর অন্দরে শূন্য দশমিক ২৪ একর (২৪ শতাংশ) অব্যবহৃত খালি জায়গা মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স এবং মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের অনুকূলে প্রতি বর্গফুট বার্ষিক ৪৬ টাকা হারে স্পেস রেন্টের ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে ছয় মাসের জন্য লাইসেন্স/বরাদ্দ দেওয়া হয়। বন্দর সচিব, বোর্ডের তিন সদস্য ও চেয়ারম্যান মিলে এ সিদ্ধান্তে সই করেন। তবে বরাদ্দ হস্তান্তর হওয়ার পর আলোচনা তৈরি হলে নৌ-উপদেষ্টার নির্দেশনার বিষয়টি ‘ক্লারিক্যাল মিস্টেক’ দাবি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নথি পর্যালোচনায় যা মিললো

জাগো নিউজের হাতে আসা নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বরাদ্দ পরবর্তীসময়ে গত ৯ অক্টোবর জায়গাটি ইজারাগ্রহীতা দুই ব্যক্তিকে দখল বুঝিয়ে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২৯ সেপ্টেম্বরের ওই বরাদ্দ অনুমোদনের একটি শর্ত ছিল- ‘উক্ত জায়গায় কোনো প্রকার কাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। শুধু খোলা জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা করতে হবে।’ কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার তিনদিনের মাথায় ১২ অক্টোবর চার হাজার বর্গফুটের একটি কাঁচা টিনশেড নির্মাণের আবেদন করেন দুই লিজগ্রহীতা। ৪ নভেম্বর আবেদিত চার হাজার বর্গফুটের কাঁচা টিনশেড নির্মাণের অনুমোদন দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৬ নভেম্বর অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদনের বিষয়ে দুই লিজগ্রহীতাকে অবগত করে চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে ৭ ডিসেম্বর সরেজমিনে গিয়ে বরাদ্দ জায়গাটির লোহার ফটক তালাবন্ধ পাওয়া যায়। কোনো অবকাঠামো নেই জায়গাটিতে।

আরও পড়ুনরমজানের আগাম ভোগ্যপণ্য আসছে খাতুনগঞ্জে, কমছে দামবেসরকারি প্ল্যান্টের তেল কিনে ৩ মাসে বিপিসির ‘গচ্চা’ ২৮ কোটি টাকালালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল: গ্লোবাল অপারেটরে দেশের লাভ না ক্ষতিপাইপলাইন থেকে যমুনার পৌনে ৪ লাখ লিটার ডিজেল গেলো কোথায়

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে আছদগঞ্জ এলাকার বন্দরের ২৪ শতক জমি স্পেস রেন্টের ভিত্তিতে অস্থায়ী লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নিজস্ব প্যাডে আবেদন করেন খাতুনগঞ্জের মেসার্স পূবালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সুব্রত মহাজন। আবেদনে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া হয়- ২২২, লক্ষ্মী বিতান, খাতুনগঞ্জ।

লিজগ্রহীতার আবেদনে যা আছে

আবেদনে উল্লেখ করা হয়- আবেদনকারী মেসার্স পূবালী ট্রেডার্সের মাধ্যমে বহু বছর ধরে বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানি করা খাদ্যশস্য ডাল, গম, চনা (ছোলা), ভুট্টা ইত্যাদি মালামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহ করে আসছেন। ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়ায় উক্ত মালামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহের যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা না থাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। নগরীর সুজাকাটগড় মৌজার চামড়ার গুদাম এলাকায় আছদগঞ্জ রোডে বন্দরের ২৪ শতাংশ খালি জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ওই জায়গাটুকু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য স্পেস রেন্টের ভিত্তিতে অস্থায়ী লাইসেন্স (নবায়নযোগ্য) পাওয়ার আবেদন করেন। বরাদ্দ পেলে ওই জায়গায় ৮৫ ফুট বাই ৯০ ফুট পরিমাপের একটি কাঁচা/সেমিপাকা শেড নির্মাণ করে মালামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা হবে। বন্দরের প্রচলিত নিয়ম-কানুন মেনে, ধার্য ফি পরিশোধ করার বিষয়ে সম্মত থাকার কথা উল্লেখ করা হয় আবেদনে।

একবার ব্যর্থ হয়ে ফের আবেদন

ওই সময়ে বরাদ্দ পেতে ব্যর্থ হয়ে হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই জায়গাটি ফের বরাদ্দ পেতে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সরাসরি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন সুব্রত মহাজন। এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য পরের ২৪ সেপ্টেম্বর বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম আজাদ। নজরুল ইসলাম আজাদ বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদায়িত রয়েছেন।

সুব্রত মহাজন জায়গাটি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে এসে আমাকে বললো- তার কাছে টাকা-পয়সা নাই। তখন জায়গাটি পার্টনার আমাকে নিতে বললো।-লিজগ্রহীতা মোস্তাফিজুর রহমান

সবশেষ জায়গাটি বরাদ্দ পেতে চলতি বছরের গত ২৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে সুব্রত মহাজন। তবে এবার পূবালী ট্রেডার্সের একই প্যাডে আবেদনকারী হিসেবে সঙ্গে রাখা হয় ১২৯৫, আশরাফ আলী রোড ঠিকানার মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমানকে। আবেদনে মেসার্স পূবালী টেডার্স এবং মেসার্স রহমান ট্রেডিং উভয়ের মাধ্যমে বহু বছর ধরে বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানি করা খাদ্যশস্য ডাল, গম, চনা, ভুট্টা ইত্যাদি মালামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

‘মিথ্যা তথ্যে’ আবেদন

তবে জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ‘সুব্রত মহাজন নিজেকে আমদানি করা খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্রথমে জায়গাটি বরাদ্দের আবেদন করেন। এখন তিনি ওই ব্যবসাই করেন না। পূবালী ট্রেডার্স নামে তার প্রতিষ্ঠানটিও প্যাডসর্বস্ব। অন্যদিকে আরেক আবেদনকারী মোস্তাফিজুর রহমান সুতা ব্যবসায়ী। তাকে খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে অংশীদার বানিয়ে শেষ আবেদনটি করেন সুব্রত।

সরেজমিনে সুব্রত মহাজনের ব্যবসায়িক ঠিকানা ২২২, লক্ষ্মীবিতান, খাতুনগঞ্জে গিয়ে মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ওই ঠিকানায় সুব্রত মহাজনের ভাই দেবু মহাজনের মেসার্স এ এম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন বলেন, ‘সুব্রত ওখানে থাকেন না, পূর্বালী ট্রেডার্সও তারা চেনেন না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের ১২৯৫, আশরাফ আলী রোড ঠিকানায় মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই ঠিকানার চারতলা ভবনটি মোস্তাফিজুর রহমানের। রূপালী ব্যাংক ওমর আলী মার্কেট শাখাটি ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায়। মোস্তাফিজুর রহমান সুতার ব্যবসা করেন।

আবেদনের পরপরই অনুমোদন

সবশেষ আবেদনের মাত্র ছয়দিনের মাথায় অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের দুজনের অনুকূলে জায়গাটি বরাদ্দ অনুমোদন দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখের বোর্ড সভার এজেন্ডার সার সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়- ‘সুজাকাঠগড় মৌজার ২৪ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি ও ২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স এবং মেসার্স রহমান ট্রেডিং থেকে দুটি আবেদন পাওয়া যায়। এছাড়াও আবেদনের সঙ্গে ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত একটি পত্রও (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ) চবক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠান। ২০২৫ সালের ৩ জুলাই নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চবক শাখা থেকে চেয়ারম্যান বরাবর একটি পত্র দেওয়া হয় এবং নৌ-উপদেষ্টা মহোদয় উল্লেখিত জায়গা অস্থায়ীভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্পেস রেন্টের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান/চবক মহোদয়কে নির্দেশনা দেন।’

এজেন্ডার সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা ‘উপদেষ্টার নির্দেশনার’ বিষয়টি ক্লারিক্যাল মিস্টেক। এ ধরনের বিষয়ে কখনো উপদেষ্টা মহোদয় সুপারিশ করেন না, এটিতেও করেননি।- বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক

ওই এজেন্ডার আরেক অংশে উল্লেখ করা হয়, ‘বিগত ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে উক্ত জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু পরবর্তীসময়ে উক্ত দরপত্র বাতিল হয়। আজ (বরাদ্দ অনুমোদনের তারিখ) অবধি সেই প্রস্তাবিত জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। খালি অবস্থায় থাকায় বন্দর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

তবে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল যেদিন ওই দরপত্রের নোটিশ দেওয়া হয়, দিনটি ছিল ঈদের ছুটির পরের দিন। এমন কাণ্ডে সমালোচনার পর দরপত্রটি বাতিল করা হয় বলে বন্দরের একটি সূত্র জানায়।

যা বলছেন দুই লিজগ্রহীতা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিজগ্রহীতা সুব্রত মহাজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই জায়গা এখন আমার অধীনে নেই। ওটি মোস্তাফিজুর রহমানের অধীনে চলে গেছে। আমার টাকা-পয়সা নাই তো, তাই বন্দরে আবেদন করে ওনাকে (মোস্তাফিজ) দিয়ে দিয়েছি।’

নৌ-উপদেষ্টার সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই জায়গার জন্য সবকিছু মন্ত্রণালয় থেকে অর্ডার হয়েছে। ওখানে বন্দর চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছে, চেয়ারম্যান সিস্টেম করে লাইসেন্স দিয়েছেন।’

আবেদনে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, বর্তমানে ওই ঠিকানায় না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তাই ওখানে থাকি না।’

পরে কথা হয় মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জায়গাটা আগেও পেয়েছিলাম। পাঁচ বছর আগে। যে কোনো কারণে তখন আমার টাকাও মাইর গেছে। ওই সময় অন্য আরেকজন লোক আমাকে বলেন- বন্দরের সঙ্গে আমাদের লাইন আছে, জায়গাটা পাবেন। ওনার নাম টিটু, ওমর আলী মার্কেটের দোকানদার। এজন্য টিটুকে চার লাখ টাকাও দিছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ওই টাকা টিটু বন্দরে দিয়েছেন বলেছিলেন। আমি কিছু জানি না, আমি তো সোজা মানুষ। তখন থেকে টিটুর কাছ থেকে জায়গাটি আমি ব্যবহার করতাম। হঠাৎ একদিন বন্দর থেকে লোকজন এসে আমাকে উচ্ছেদ করে। তখন বিষয়টি আমি তাদের জানিয়েছিলাম।’

বর্তমানে রেস্ট লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুব্রত মহাজন জায়গাটি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে এসে আমাকে বললো- তার কাছে টাকা-পয়সা নাই। তখন জায়গাটি পার্টনারে আমাকে নিতে বললো।’

ওই জায়গা অস্থায়ী ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (সুব্রত) আওয়ামী লীগের আমল থেকে জায়গাটি নেওয়ার জন্য লবিং করে আসছিলেন। এটির জন্য উনি লেগে ছিলেন। বন্দরে সব যোগাযোগ সুব্রত করেছেন। এখন পুরোপুরি আমাকে দিয়ে দিয়েছে। তবে আমি জায়গাটি নিয়ে ভুল করেছি। অনেক বেশি ভাড়া। এত ভাড়া জানলে নিতাম না।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাল-ডালের ব্যবসা করি না। সুতার ব্যবসা করি। এলাকায় আমার সুনাম আছে।’

‘নির্দেশনা দেননি উপদেষ্টা’

জায়গাটি অস্থায়ী লিজ দেওয়ার নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত হতে নৌ-উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে নৌ-উপদেষ্টার একান্ত সচিব (সরকারের উপসচিব) মো. জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি উপদেষ্টা মহোদয়কে অবগত করেছি। উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন- এ ধরনের কোনো বিষয়ে তিনি (উপদেষ্টা) মৌখিক বা লিখিত কোনো ধরনের নির্দেশনা দেননি।’

জায়গাটি বরাদ্দের বিষয়ে নথি উপস্থাপনের পুরো কাজটিই করেন চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী ব্যবস্থাপক (এস্টেট-২) মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি স্পোক পারসন নই। সচিব মহোদয় বিষয়টি নিয়ে বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এজেন্ডার সার সংক্ষেপে উল্লেখ করা ‘উপদেষ্টার নির্দেশনার’ বিষয়টি ক্লারিক্যাল মিস্টেক। এ ধরনের বিষয়ে কখনো উপদেষ্টা মহোদয় সুপারিশ করেন না, এটিতেও করেননি। জায়গাটি বরাদ্দের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আসা প্রস্তাব আলোচনা করেই বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

মিথ্যা তথ্যে বন্দরের জায়গা বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম