মুফতি মোহাম্মদ আদনান
আমরা অনেক সময় ভাবি নামাজের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না কেন? কীভাবে নামাজ আদায় করলে মনোযোগ ধরে রাখতে পারব, পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে পারব? এই প্রশ্নগুলো সাহাবায়ে কেরামের মনেও আসতো। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, তিনটি আমল নামাজকে পরিপূর্ণ করে: ১. ভালোভাবে অজু করা, ২. নামাজের কাতার ভালোভাবে সোজা করা, ৩. জামাতে নামাজ আদায় করা। যে ব্যক্তি এই তিনটি আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তার নামাজে পরিপূর্ণতা দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
১. ভালোভাবে অজু করানামাজের পূর্ব শর্ত হলো পবিত্রতা অর্জন করা। অর্থাৎ শরীর, কাপড় ও নামাজের জায়গা পবিত্র রাখা। এই পবিত্রতা অর্জনে যে যত বেশি মনোযোগী তার নামাজও ততো বেশি সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। তাই অজুর ক্ষেত্রে ফরজ আদায়ের পাশাপাশি সুন্নত ও মুস্তাহাবগুলো গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতে হবে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, অজুর অঙ্গ ধৌত করার সময় যে পর্যন্ত পানি পৌঁছবে, কাল হাশরে সেই পর্যন্ত অঙ্গসমূহ জ্বলজ্বল করতে থাকবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
তাই উত্তমভাবে অজু করতে হবে আমাদের। অজুর মাঝে দোয়াগুলো পড়ুন। বিশেষ করে শুরুতে ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহ’ আর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া সুন্নত। এভাবে খেয়াল করে করে অজু করতে হবে। সম্ভব হলে অজুর পর তাহিয়্যাতুল অজুর দুই রাকাত নামাজ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, তাহিয়্যাতুল অজু আদায় করলে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যায়। (সহিহ মুসলিম)
অজু ভালোভাবে করতে গিয়ে পানির অপচয় করা যাবে না। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক সাহাবিকে বলেন, তুমি নদীর পাড়ে অজু করলেও পানি অপচয় করতে পারো না। (সুনানে ইবনে মাজা) অপচয় করা বড় গুনাহ। আর অজুতে পানির অপচয় হলো, প্রয়োজন ছাড়া প্রতিটি অঙ্গ তিনবারের বেশি ধোয়া। তাই নেক কাজের সঙ্গে গুনাহ করা যাবে না।
২. কাতার সোজা করাকাতার সোজা করা নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাতার সোজা করতে হয় পায়ের গোড়ালির দিক থেকে। কাতারের মধ্যে ছোট-বড় অনেকেই দাঁড়ায়। সবার পায়ের মাপ সমান নয়। সব দিক সমান করা সম্ভব নয় তাই গোড়ালির দিকটা সকলকে মিলিয়ে সমান রাখতে হবে।
নামাজের পূর্বে গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, সবার পায়ের গোড়ালি যেন এক বরাবর থাকে। কাতারের মাঝে কোন ফাঁকা যেন না থাকে । এমন ভাবে দাঁড়াতে হবে যেন প্রত্যেকের কাঁধ ও শরীর এক সমান থাকে। একামতের সময় দ্রুত কাতার সোজা করা উত্তম। নিজের সামনের জায়গা নিজেই পূরণ করা উচিত অন্যকে পেছন থেকে না ডেকে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা কর। কাঁধসমূহকে বরাবর রাখ। ফাঁকা জায়গা পূর্ণ কর। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিয়ো না। যে কাতার মিলিয়ে দেয় আল্লাহ তাআলাও তাকে মিলিয়ে দেন। যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৬৬৬)
৩. জামাতে নামাজ আদায় করানামাজ পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য আরেকটি সহজ উপায় হলো জামাতে নামাজ পড়া। জামাতের মধ্যে অনেক ধরনের মানুষ সম্মিলিতভাবে নামাজ আদায় করে। তাই কারো কোনো ভুল হয়ে গেলে অপরজন তা ধরতে পারে। এভাবে শুধরে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কারো নামাজে মনোযোগে ঘাটতি বা অন্যান্য অপূর্ণতা থাকলে তাও অন্যদের বরকতে আল্লাহ তাআলা পূর্ণ করে দিতে পারেন।
জামাতের সাথে ফরজ নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আল্লাহ তাআলা একা নামাজ আদায়কারীর তুলনায় জামাতে নামাজ আদায়কারীকে ২৭ গুন বেশি সাওয়াব দিয়ে থাকেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
সুতরাং যে ব্যক্তি এক দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করে সে, একা নামাজ আদায়কারীর তুলনায় ২৭ দিন অগ্রসর হয়ে যায়। তাই নামাজ পরিপূর্ণ করতে জামাতে নামাজ আদায়ের বিকল্প নেই।
লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা।
ওএফএফ