বিনোদন

হার না মানা শিল্পী সিঁথি সাহা

জীবন কখনো কখনো থামিয়ে দেয় মানুষের চলার গতি। কখনো আবার অজান্তেই সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয় কঠিন বাস্তবতার সামনে। সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহার জীবনও তেমনই এক বাঁক বদলের গল্প। ২০২২ সালে তিনি জানতে পারেন, তার শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। সেই সময় তিনি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এমন সংবাদ কারও জন্যই দুঃস্বপ্নের মতো, আর শিল্পীর জন্য তো আরও বেশি-কিন্তু সিঁথি হার মানেননি। বরং তিনি বেছে নিয়েছেন লড়াইয়ের পথ। আজ (১১ ডিসেম্বর) সিঁথি সাহার জন্মদিন। এমন দিনে জেনে নেওয়া যাক সিঁথির কঠিন দিনগুলোর কথা।

সিঁথির এ লড়াই ছিল গভীর, দীর্ঘ এবং নিঃশব্দ। অপারেশন, কেমোথেরাপি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চুল পড়ে যাওয়া-শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনকেও ব্যথা দিত এসব। সন্তানকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আনতে না পারার ভয় তাকে কাঁপিয়ে দিত। কিন্তু তার মন ভাঙেনি। জীবনের প্রতি মায়া, মায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা, আর শিল্পীর অদম্য মানসিক শক্তিই তাকে টেনে তুলেছিল প্রতিটি মুহূর্তে।

সিঁথি নিজেই বলেছেন- ‘ক্যানসারের কথা শুনলে আমরা অর্ধেক অসুস্থ হয়ে যাই। কিন্তু আমি নিজেকে কখনো ভেঙে পড়তে দিইনি। মনোবলই আমাকে বাঁচিয়েছে।’

বাবা-মাকে না জানিয়ে একা সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। শুধু ছোট ভাই ছিল পাশে। পরপর কেমো নিতে নিতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লেও মনের জোর তাকে এগিয়ে রাখে। যে সময়টায় বেশিরভাগ মা নিশ্চিন্তভাবে মাতৃত্ব উপভোগ করেন, সিঁথি সেই সময়টি কাটিয়েছেন অস্ত্রোপচার, ঝুঁকি ও কেমোর পরিকল্পনা নিয়ে। তারপরও তিনি সন্তানের জন্মদানে পিছু হটেননি। ঝুঁকি জেনেও তিনি মাতৃত্বকে বেছে নিয়েছেন বুক ভরা সাহসে।

তার ভাষায়- ‘সন্তানের জন্ম দেওয়া আমার জন্য বিরাট ঝুঁকি ছিল। কিন্তু আমি জানতাম, সৃষ্টিকর্তা আমাকে শক্তি দেবেন। আর সত্যিই দিয়েছেন।’

সিঁথির ক্যানসার ছিল ব্রেস্ট ক্যানসার। পরিবারের কারও এই রোগের ইতিহাস না থাকায় অনেকটাই বিস্মিত হয়েছিলেন চিকিৎসকরাও। তিনি বলেন, ইউরোপের নারীদের মধ্যে এই রোগ খুব সাধারণ হলেও বাংলাদেশে সচেতনতা এখনো তেমন তৈরি হয়নি। নিয়মিত পরীক্ষা, মানসিক শক্তি এবং চিকিৎসা-এই তিনটিই ক্যানসার মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

আজ সেই অন্ধকার সময়কে পেরিয়ে সিঁথি পুরোপুরি সুস্থ। ফিরে পেয়েছেন মঞ্চ, মাইক্রোফোন, দর্শক আর গান। তবে তিনি আগের মতো নেই-তিনি আরও শক্ত, আরও অনুপ্রাণিত, আর সবচেয়ে বড় কথা-তিনি আরও মানবিক।

সিঁথি সাহা শুধু একজন গায়িকার নাম নয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, শিল্পী শুধু গানের মানুষ নয়-জীবনেরও মানুষ। তিনি দেখিয়েছেন-ক্যানসার মানেই শেষ নয়; বরং নতুন শুরুও হতে পারে।

আরও পড়ুন:কবে ফুটবে নিরব-পরীমনির গোলাপসিনেমায় কাজ করলেও কখনো নাটক ছাড়ব না : তানিয়া বৃষ্টি

জীবনের মঞ্চে তিনি যেভাবে ফিরে এসেছেন, তা শুধু তার নিজের জেতাই নয়-এটা অসংখ্য মানুষের জন্য শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস।

শৈশবে মায়ের কাছ থেকে সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন সিঁথি সাহা। তারপর শাস্ত্রীয়, লোক ও আধুনিক সংগীত রপ্ত করেছেন ছায়ানট ও সম্মেলন পরিষদ থেকে। রবীন্দ্রসংগীতের জন্য চারটি জাতীয় পুরস্কারসহ পেয়েছেন আরও অনেক পুরস্কার।

এমএমএফ/এলআইএ/জেআইএম