গান্ধী পরিবার ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে স্বাধীন ভারতের প্রথম ভোট চোর বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে বিতর্কের সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি। এদিন অমিত শাহ ও বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা তীব্র রূপ নেয়।
বুধবার নিজের বক্তব্যে বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে শাহ বলেন, এখন তারা একদিকে ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ তুলছেন, আবার অন্যদিকে বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (এসআইআর) প্রক্রিয়ারও বিরোধিতা করছেন, যা মূলত তালিকা হালনাগাদ ও শুধু যোগ্য ভোটারদের নিশ্চিত করার জন্যই করা হচ্ছে। শাহ বলেন, বিজয়ী হলে সব ঠিক থাকে, নতুন কাপড় পরে শপথ নেন। কিন্তু বিহারের মতো হেরে গেলেই ভোটার তালিকায় সমস্যা দেখা দেয়। দুই নীতি চলবে না।
বক্তৃতার একপর্যায়ে শাহ অভিযোগ তোলেন, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণের সময়ই প্রথম ‘ভোট চুরি’ হয়েছিল। তিনি বলেন, কংগ্রেস প্রদেশ কমিটির সভাপতিদের ভোটে ২৮টি ভোট পড়েছিল সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের পক্ষে, আর মাত্র ২টি পড়েছিল জওহরলাল নেহরুর নামে, তবু প্রধানমন্ত্রী হন নেহরুই।
শাহ আরেকটি উদাহরণ টেনে বলেন, রায়বেরেলি থেকে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনী বিজয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট বাতিল করেছিলেন, এটিও ছিল ‘বড় ধরনের ভোট চুরি’। তার দাবি, এরপরই ইন্দিরা নিজেকে রক্ষায় এমন আইন আনেন, যাতে প্রধানমন্ত্রীকে বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা না যায়। শাহ বলেন, বিরোধী দলনেতা এখন নির্বাচন কমিশনারদের দায়মুক্তি নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু এ বিষয়ে তাঁর কী বলার আছে? ইন্দিরা গান্ধী নিজেকেই দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।
তিনি আরও অভিযোগ তোলেন, পরে ইন্দিরা সিনিয়রিটি অগ্রাহ্য করে চতুর্থ স্থানের বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি বানান ও সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি জিতে যান। শাহের ভাষায়, এগুলোই ইতিহাস, যা তাদের শেখানো হয় না।
রাহুলের মা ও সাবেক কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকেও নিশানা করেন শাহ। তিনি বলেন, একটি মামলায় অভিযোগ আছে, সোনিয়া নাগরিক হওয়ার আগেই ভোট দিয়েছিলেন। এই মন্তব্যে কংগ্রেসের সংসদ সদস্যরা তীব্র আপত্তি জানালে শাহ বলেন, আমি কেবল একটি তথ্যই বলেছি।
ইভিএম ও এসআইআর নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি প্রসঙ্গে শাহ বলেন, প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অভিবাসীদের ভোটার তালিকায় রাখতে দেওয়া। এই মন্তব্যের পরই বিরোধীরা ওয়াকআউট করে।
বাইরে এসে রাহুল সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল আক্রমণাত্মক ও তিনি আমাদের উত্থাপিত কোনো প্রশ্নেরই সঠিক জবাব দেননি। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা, ইভিএম কাঠামো কিংবা আমার সংবাদ সম্মেলনের প্রমাণ, কোনোটারই প্রমাণ দেননি।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শাহের বক্তব্যের প্রশংসা করেন। এক্সে তিনি লেখেন, অমিত শাহ অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তথ্যসমৃদ্ধভাবে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শক্তি তুলে ধরেছেন ও বিরোধীদের মিথ্যাচার উন্মোচন করেছেন।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ