রাজনীতি

যেভাবে রাজনীতিতে আসলেন ওসমান হাদি

দেশজুড়ে আলোচনায় শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা-৮ আসনে রিকশায় বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। দল-মত নির্বিশেষে সবাই তার জন্য দোয়া করছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছে বিদেশি ফোন নম্বর দিয়ে ফোনকলে এক মাস আগেই হত্যার হুমকির কথা জানিয়েছিলেন হাদি। তার ওপর হামলাকারীর পরিচয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি। তবে হাদির ওপর হামলার এমন নমুনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি,জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই ঘটনার উদ্দেশ্য হিসেবে নির্বাচনকে বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

যেভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে হাদি

ঝালকাঠির নলছিটি থেকে উঠে আসা হাদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের আগে কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে দেখা যায়নি। তার বাবা পেশায় মাদরাসা শিক্ষক। হাদি নেছারাবাদ কামিল মাদরাসায় পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে৷ এখান থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠন করেন ইনকিলাব মঞ্চ। শুরু থেকে আওয়ামী লীগ এবং ভারত বিরোধী নানা কর্মসূচি দিয়ে আলোচনায় আসেন। লক্ষ্য ছিলো—অধিকার, ন্যায় ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা। শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি স্বাধীন, ন্যায়সঙ্গত ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়া।

ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠার পরই জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ-আহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে শাহবাগে একাধিক সমাবেশের আয়োজন করেন। অনর্গল কথা বলা আর বাচনভঙ্গির কারণে অল্প সময়েই জয়প্রিয় হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর গত বছর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতেও রাজপথে সরব হন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার সময় অংশ নেন হাদি৷ গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ এনসিপি নেতারা সমাবেশ করতে গেলে সেখানে হামলার শিকার হয়৷ এই ঘটনায় ওসমান হাদি তার সমর্থকদের সাথে নিয়ে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন৷ সেসময় তার কয়েকটি আশোভন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়৷ অবশ্য অনেকের কাছে এই বক্তব্যের জন্য তিনি প্রশংসিত হন।

নির্বাচনি লড়াইয়ে হাদির যেভাবে আগমন

জুলাই অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন হাদি। প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ সদস্য জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিলেও হাদি যাননি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত মাঠে তৎপর রয়েছেন তিনি। বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাতাসা-মুড়ি নিয়ে নির্বাচনে প্রচারণা,ভ্যান নিয়ে ব্যাতিক্রমী প্রচারণা, ভোররাতে ফজরের নামাজের পর মুসল্লিদের কাছে ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন ব্যতিক্রম প্রচারণায় বেশ প্রশংসাও জুড়িয়েছিলেন হাদি।

গত ১৫ নভেম্বর মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় প্রচারণায় গেলে তার ওপর ময়লা পানি ছুড়ে ফেলা হয়। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তবে এই ঘটনায় প্রতিবাদ না জানিয়ে হাদি বলেছিলেন,আরও ময়লা পানি মারেন অসুবিধা নাই।

সম্প্রতি বরিশালের বাকুগঞ্জে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে হেনস্তা করা হয়। এই ঘটনায় ফুয়াদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওসমান হাদি বরিশালে ফুয়াদের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন বলেও জানিয়েছিলেন।

মূলত আওয়ামী লীগ এবং ভারত বিরোধী বক্তব্যের জন্য শরিফ ওসমান হাদি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছিলেন। আবার তীব্র সমালোচনার জেরে তার প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই রোষানলে আজ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাদিকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে।

এনএস/এসএনআর/এএসএম