ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) পরিপত্র-২ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। অন্যথায় জামানত বাবদ জমা দেওয়া ৫০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হবে।
ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ পরিপত্রে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল ও গ্রহণ, জামানত, প্রস্তাবকারী-সমর্থনকারীর যোগ্যতা, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের তথ্য প্রদান, মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
ইসির জারি করা পরিপত্রে দেখা গেছে, কোনো প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। অন্যথায় জামানত বাবদ জমা দেওয়া ৫০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জামানত জমা দিতে হবে। এ অর্থ নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ইসির অনুকূলে জমা দেওয়া যাবে। একই নির্বাচনি এলাকায় একাধিক মনোনয়নপত্র দিলে একটি জামানতই যথেষ্ট হবে। অন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে চালানের সত্যায়িত অনুলিপি দিতে হবে। জামানতের বাইরে কোনো অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ বা প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জামানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক, যে কোনো ব্যাংক বা সরকারি ট্রেজারি বা সাব ট্রেজারিতে ১০৯০৩০২১০১৪৪৩-৮১১৩৫০১ কোড নম্বরে জমা দিতে হবে। নগদে প্রাপ্ত জামানতের অর্থ রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার সরকারি খাতে জমা দেবেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলপরিপত্রে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি দাখিলের জন্য মনোনয়ন ফরম (ফরম-১) সংগ্রহ করবেন। ইতিমধ্যে এসব ফরম ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ফরম বিতরণের জন্য আলাদা রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যোগ্য ব্যক্তিরা যথাযথভাবে পূরণ করা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল বা জমা দেওয়া যাবে।
মনোনয়নপত্র জমাদানইসির নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। ওই দিন বা তার আগের যেকোনো দিনে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী মনোনয়নপত্র দাখিল করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুচ্ছেদ ১২ এর (৩) অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার তা গ্রহণ করবেন।
অফিসারগণ মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় নির্ধারিত স্থানে ক্রমিক নম্বর দেবেন। রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় ‘রিঅ-’ এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ‘সরিঅ-’ লিখে নম্বর দেবেন। এক প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দিলে প্রথমটিতে পূর্ণ নম্বর এবং অন্যগুলোর ক্ষেত্রে বন্ধনীতে (ক), (খ) বা (১), (২) ব্যবহার করা যাবে।
প্রাপ্তি রসিদ ও বাছাইয়ের নোটিশমনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় প্রতিটি মনোনয়নপত্রের তথ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মনোনয়নপত্রের তৃতীয় অংশে দাখিলকারীর নাম, জমাদানের তারিখ ও সময় উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া, নির্বাচনি এলাকার নাম ও নম্বর, প্রার্থীর নাম, মনোনয়নপত্র জমার তারিখ ও সময় এবং বাছাইয়ের নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ করে মনোনয়নপত্রের পঞ্চম অংশে যুক্ত থাকা প্রাপ্তিস্বীকার রসিদ তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থী বা প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীকে দিতে হবে।
ইসির জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারের ওপর ন্যস্ত। তাই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিলকৃত সব মনোনয়নপত্র ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার পরপরই নিরাপত্তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে।
প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর যোগ্যতাগণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার যে কোনো ভোটার সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রস্তাব বা সমর্থন করতে পারবেন। তবে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী হিসেবে কেউ একাধিক মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করতে পারবেন না।
প্রতিটি মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর সম্মতি, অযোগ্যতা না থাকার ঘোষণা এবং তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকায় মনোনয়ন জমা না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নরাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের নিজস্ব প্যাডে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।একটি নির্বাচনি এলাকায় যদি কোনো রাজনৈতিক দল একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তবে আগামী ২০ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হবে।
চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থী দলীয় প্রতীক পাবেন, যদি না তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পরে আলাদা পরিপত্রে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ইসি।
এমওএস/এমএমকে/জেআইএম