লাইফস্টাইল

ঘুমের অভাবে কমে যেতে পারে শুক্রাণুর কোয়ালিটি

ঘুমকে আমরা অনেক সময় বিলাসিতা মনে করি। কাজের চাপ, অনেক রাত পর্যন্ত স্ক্রিন দেখা, দুশ্চিন্তা — সব মিলিয়ে ঘুম কেটে যায়। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এই ‘কম ঘুম’ শুধু ক্লান্তি বাড়ায় না, পুরুষের হরমোন ও প্রজনন ক্ষমতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ঠিকমতো না ঘুমালে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। আর এই টেস্টোস্টেরনই পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য ও শুক্রাণু তৈরির মূল চালিকাশক্তি।

ঘুমের সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের সম্পর্ক কোথায়?

টেস্টোস্টেরন মূলত রাতের ঘুমের সময়ই বেশি তৈরি হয়। বিশেষ করে গভীর ঘুমের পর্যায়ে এই হরমোনের নিঃসরণ সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা বলছেন, আমাদের শরীরের জৈব ঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদম ঘুম–জাগরণ চক্র ঠিক রাখার পাশাপাশি হরমোনের ভারসাম্যও নিয়ন্ত্রণ করে।

এই জৈব ঘড়ির কেন্দ্র হলো মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে থাকা সুপ্রাকায়াজম্যাটিক নিউক্লিয়াস। নিয়মিত ঘুমের সময় এলোমেলো হলে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই বিগড়ে যায়। ফলাফল—টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে।

কম ঘুম মানে শুক্রাণুর ঝুঁকি

শুধু হরমোন নয়, কম ঘুমের প্রভাব পড়ে শুক্রাণুর সংখ্যায় ও গুণগত মানে। ইউরোপিয়ান মেডিকেল গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, যারা দীর্ঘদিন পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম হতে পারে, গতিশীলতা কমে এবং গঠনগত সমস্যাও দেখা দেয়।

চিকিৎসকেরা ব্যাখ্যা করছেন, টেস্টোস্টেরন কমে গেলে স্পার্ম তৈরির প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে। ফলে পুরুষের উর্বরতা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক সময় যা বাইরে থেকে বোঝাও যায় না।

আজকের জীবনযাপন কেন দায়ী

বর্তমান জীবনযাত্রায় ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অনিয়ম। রাত জেগে কাজ, মোবাইল বা ল্যাপটপের আলো, মানসিক চাপ, উদ্বেগ—সব মিলিয়ে মস্তিষ্ক ঠিক সময়ে বিশ্রাম নিতে পারে না। স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত চার–পাঁচ ঘণ্টা ঘুমকে শরীর কখনোই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে নিতে পারে না। বাইরে থেকে মানিয়ে নিলেও ভেতরে ভেতরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে।

সমাধান কোথায়?

ভালো খবর হলো, এই ক্ষতি অনেক ক্ষেত্রেই উল্টানো সম্ভব। নিয়মিত রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, ঘুমের আগে স্ক্রিন ব্যবহার কমানো, হালকা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মেডিটেশন—এসব অভ্যাস ধীরে ধীরে ঘুমের মান উন্নত করে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের গড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হলে টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকে। অর্থাৎ ভালো ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটি পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যেরও নীরব রক্ষাকবচ।

ঘুমকে অবহেলা করা মানে নিজের শরীরের সঙ্গে আপস করা। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কম ঘুম শুধু ক্লান্তি নয়, ভবিষ্যতের বাবা হওয়ার সম্ভাবনাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। সুস্থ হরমোন ও সুস্থ শুক্রাণুর জন্য, ভালো ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়—এটা প্রয়োজন।

সূত্র: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন, ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ

এএমপি/এএসএম