বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনার আগে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য থেকে সরে এসেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে বিকল্প নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে এই অবস্থান পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। রাশিয়ার হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ন্যাটোতে যোগদানকে সবচেয়ে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল কিয়েভ। এমনকি ইউক্রেনের সংবিধানেও ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে নতুন অবস্থান রাশিয়ার অন্যতম প্রধান শর্তের সঙ্গেও মিলছে। যদিও ইউক্রেন এখনো মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যাচ্ছে।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অংশীদারদের কাছ থেকে আইনি বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়া ন্যাটো সদস্যপদের বিকল্প হিসেবে একটি সমঝোতা হতে পারে।
আরও পড়ুন>>ট্রাম্পের ২৮ দফা/ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে কী পাবে যুক্তরাষ্ট্র?রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনায় কী আছে?জোর করেই ইউক্রেনকে শান্তিচুক্তিতে সই করাবেন ট্রাম্প?
তিনি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চেয়েছে। এগুলোই ছিল প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু অংশীদার এই পথে সমর্থন দেয়নি।
জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যাটোর অনুচ্ছেদ পাঁচের মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি এবং কানাডা ও জাপানের মতো দেশের সহায়তা ভবিষ্যতে রাশিয়ার আরেকটি আগ্রাসন ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনিভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং ডনবাস অঞ্চলের প্রায় ১০ শতাংশ এলাকা, যা এখনো কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। মস্কোর আরও দাবি, ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে কোনো ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।
এর আগে রাশিয়ার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছিল, পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট আর পূর্ব দিকে সম্প্রসারিত হবে না, এমন একটি লিখিত অঙ্গীকার চান। এর অর্থ ইউক্রেন, জর্জিয়া, মলদোভা ও সাবেক সোভিয়েত অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর ন্যাটো সদস্যপদ কার্যত বাতিল করা।
বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্রের দূত ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতির সময় জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন একটি ‘মর্যাদাপূর্ণ শান্তি’ চায় এবং ভবিষ্যতে রাশিয়া যাতে আর হামলা চালাতে না পারে, সে ধরনের নিশ্চয়তা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের প্রসঙ্গে জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, রাশিয়া শহরগুলোতে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে এবং বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো ধ্বংস করে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে।
রোববার ও সোমবারের বৈঠকের নির্দিষ্ট কাঠামো প্রকাশ না করা হলেও একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনার জার্মানিতে যাচ্ছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রায় চার বছর আগে ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর এই সফর অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্সকেএএ/