ব্রণ মানেই কেবল কিশোর বয়স — এই ধারণা আসলে ভুল। বাস্তবে দেখা যায়, বিশের কোটা পেরোনোর পরও অনেক নারী-পুরুষ মুখে ব্রণের সমস্যায় ভোগেন। কখনো হঠাৎ করে, কখনো দীর্ঘদিন ধরে।
প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে হওয়া এই ব্রণ শুধু সৌন্দর্যের নয়, অনেক সময় শরীরের ভেতরের নানা পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়। সাধারণত মানুষ মনে করে এটা শুধুই স্কিনের সমস্যা, কিন্তু ব্রণের পেছনে চর্মরোগ ছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। জেনে নিন -
১. হরমোনের ওঠানামা
প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো হরমোনজনিত পরিবর্তন। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের আগে, গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মের পর বা পিসিওএসের মতো সমস্যায় হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে ত্বকে অতিরিক্ত তেল তৈরি হয়, যা লোমকূপ বন্ধ করে ব্রণের জন্ম দেয়। পুরুষদের ক্ষেত্রেও স্ট্রেস বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনে হরমোনের প্রভাব দেখা দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে স্ট্রেস যেন নিত্যসঙ্গী। দীর্ঘদিন মানসিক চাপ থাকলে শরীরে কর্টিসল নামের হরমোন বেড়ে যায়, যা ত্বকে তেল উৎপাদন বাড়ায়। ফলাফল — মুখে ব্রণ, বিশেষ করে কপাল ও চোয়ালের আশপাশে।
৩. অনিয়মিত ঘুম ও জীবনযাপন
ঘুম কম হলে বা রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস থাকলে শরীর ঠিকভাবে নিজেকে রিপেয়ার করার সময় পায় না। এর প্রভাব পড়ে ত্বকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ত্বক নিস্তেজ হয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এবং সহজেই ব্রণ দেখা দেয়।
৪. খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
অতিরিক্ত চিনি, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড বা অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার অনেকের ক্ষেত্রে ব্রণ বাড়াতে পারে। পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া এবং শাকসবজি কম খাওয়ার অভ্যাসও ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. ভুল স্কিনকেয়ার ও প্রসাধনী ব্যবহার
ত্বকের ধরন না বুঝে ভারী ক্রিম, তেলতেলে মেকআপ বা কমেডোজেনিক প্রসাধনী ব্যবহার করলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত মেকআপ পরিষ্কার না করাও প্রাপ্তবয়স্ক ব্রণের একটি বড় কারণ।
৬. ওষুধ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা
কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড বা হরমোনজনিত ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ব্রণ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি থাইরয়েড সমস্যা, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মতো শারীরিক অবস্থাও ব্রণের পেছনে ভূমিকা রাখে।
কী করবেন?প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণকে অবহেলা না করে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, সুষম খাদ্য, ত্বক অনুযায়ী স্কিনকেয়ার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে স্থায়ী সমাধানের পথ।
ব্রণ অনেক সময় শরীরের ভেতরের বার্তা দেয়, সেটা বুঝে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়াই সুস্থ ত্বকের চাবিকাঠি।
সূত্র: আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি, মায়ো ক্লিনিক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এসথেটিক ডার্মাটোলজি
এএমপি/এএসএম