আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্না, বিদ্যুৎ বা গ্যাসের কাজে আগুনের ব্যবহার আমাদের করতেই হয়। একটু অসতর্কতা কিংবা হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই সবকিছু ছাই হয়ে যেতে পারে। শুধু সম্পদ নয়, ঝুঁকির মুখে পড়ে মানুষের জীবনও।
আগুন লাগার সময় অনেক ক্ষেত্রে আগুনের চেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে ধোঁয়া। বিশেষ করে বদ্ধ স্থানে আগুন লাগলে ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে প্রাণহানির ঘটনা বেশি ঘটে।
তাই আগুন লাগলে ধোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি-
মাথা ঠান্ডা রাখুনআগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ভবনে ইমারজেন্সি ডোর থাকলে সেটি ব্যবহার করুন। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন। কখনোই লিফট ব্যবহার করবেন না, কারণ বিদ্যুৎ চলে গেলে সেখানে আটকে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
আতঙ্কিত হওয়া চলবে না আগুন লাগলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত আতঙ্ক বিপদ বাড়ায়। ভয়ে হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, যা হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আবার জোরে জোরে শ্বাস নিলে আগুন থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস দ্রুত শরীরে ঢুকে পড়ে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। তাই যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুনআগুনের ধোঁয়ার মধ্যে আটকা পড়লে মুখ না ঢেকে কখনোই বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না। একই সঙ্গে সোজা হয়ে হেঁটে বের হওয়াও বিপজ্জনক। ধোঁয়ার ভেতরে থাকা অবস্থায় সব সময় নিচু হয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াতে গড়াতে নিরাপদ স্থানের দিকে এগোতে হবে।কারণ ধোঁয়ার ওপরে জমে থাকে বিষাক্ত গ্যাস, যা চোখ ও শ্বাসনালিতে দ্রুত ক্ষতি করে। আগুনের ধোঁয়া থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস চোখে-মুখে গেলে শ্বাসকষ্ট ও প্রাণহানির ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা এবং কম উচ্চতায় চলাচল করাই নিরাপদ।
চিৎকার না করে শক্তি সঞ্চয় করুনঅপ্রয়োজনে চিৎকার করলে দ্রুত শ্বাস নিতে হয়, এতে বেশি পরিমাণ বিষাক্ত ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলবেন না।
একই জায়গায় ঘুরপাক খাবেন নাধোঁয়ার মধ্যে দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ঘোরা বিপজ্জনক। দেয়াল ধরে বা মেঝে স্পর্শ করে ধীরে ধীরে এগোন। এতে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
দরজা বন্ধ রাখুনযদি বের হতে না পারেন, তাহলে যে ঘরে আছেন সেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিন। দরজার ফাঁকা অংশে ভেজা কাপড় গুঁজে দিন, যাতে ধোঁয়া ঢুকতে না পারে।
এছাড়া কোনো দরজা খুলবার আগে অবশ্যই সতর্ক হোন। হাত দিয়ে দরজায় স্পর্শ করে দেখুন-গরম অনুভব হলে দরজা খুলবেন না। এতে বুঝতে হবে দরজার ওপাশে আগুন বা তীব্র তাপ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ভেজা কাপড়ে মুখ ঢাকুন আগুনে আটকা পড়লে শুধু নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন। মুখ দিয়ে শ্বাস নেবেন না। এ সময় কাপড় বা তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। প্রয়োজনে তোয়ালে দাঁত ও ঠোঁট দিয়ে চেপে রাখুন। এটি আপনাকে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে।
জানালা খুলে দিনআগুন লাগার সময় ধোঁয়া দেখলেই আতঙ্কে জানালা ভেঙে ফেলবেন না। এতে বাইরে থেকে আরও বাতাস ঢুকে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। যদি দেখেন জানালার দিকে আগুন বা ঘন ধোঁয়া নেই, তাহলে জানালাটি সাবধানে খুলে তাজা বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শ্বাস নেওয়া সহজ হবে এবং ধোঁয়ার প্রভাব কিছুটা কমে আসবে। তবে সব সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিন।
হামাগুড়ি দিনআগুন লাগার সময় বের হওয়ার কোনো পথ চোখে পড়লে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নয়, হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ ধোঁয়ার নিচের দিকে তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার ও সতেজ বাতাস থাকে, যা শ্বাস নিতে সহায়তা করে। সূত্র: বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, রেড ক্রস
আরও পড়ুন:বাসায় আগুন থেকে সাবধান থাকতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন রাগ হলে নিজেকে শান্ত রাখবেন যেভাবে
এসএকেওয়াই/