বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা আর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেন্দ্র করেই ২০২৫ সাল গড়াবে—এমন পূর্বাভাস খুব একটা ভুল প্রমাণিত হয়নি। বছরটি যে ‘ট্রাম্প, প্রযুক্তি ও অনিশ্চয়তা’ দিয়ে প্রভাবিত হবে, বিশ্লেষকদের সেই মূল্যায়ন মোটের ওপর যথার্থই ছিল।
দ্য ইকোনমিস্টের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন। সেটিই বাস্তব হয়েছে। গত জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। অভিবাসন প্রশ্নেও ‘গণ বহিষ্কারের’ প্রদর্শনীমূলক উদ্যোগ দেখা গেছে। তবে কৃষি ও হোটেল খাতের মালিকদের চাপের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন চরম পথে যায়নি—এই অনুমানও সঠিক ছিল। তবে অভিবাসন ইস্যুতে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ কার্যকর হলে ২০২৬ সালে পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
শুল্কনীতির ক্ষেত্রেও চিত্র প্রায় একই। ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত থাকবে—এই পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত সত্য হয়েছে। তবে এই প্রভাব ২০২৬ সালেও একই থাকবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
আরও পড়ুন>>২০২৬ সালে সোনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়লেও কমতে পারে তেলের দামবিশ্বজুড়ে পানিবণ্টন নিয়ে উত্তেজনা, নজর থাকবে বাংলাদেশ-ভারতেট্রাম্পের অভিবাসী ফেরত অভিযান আরও জোরালো হবে?
সব ক্ষেত্রেই যে অনুমান সঠিক ছিল, তা কিন্তু নয়। ধারণা করা হয়েছিল, আদালত ট্রাম্পকে সবকিছু করতে দেবেন না। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সহনশীল ভূমিকা নিয়েছেন। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের মাত্রা আগাম বোঝা যায়নি। সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞাও পূর্বাভাসের বাইরে ছিল।
ভূরাজনীতিতেও সাফল্য-ব্যর্থতা মিলেমিশে আছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত পূর্বাভাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি বা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের কথা ধরা পড়েনি। একইভাবে, ইসরায়েলের হাতে ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ ভেঙে পড়া, কিংবা ভারত-পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়ার সংক্ষিপ্ত সংঘাতও অনুমানের বাইরে ছিল।
নির্বাচন-জলবায়ুর পূর্বাভাসে মিশ্র ফলনির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য এসেছে। কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর বিদায় এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মার্ক কার্নির উত্থান সঠিকভাবে ধরা পড়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ায় সংখ্যালঘু সরকারের পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়; সেখানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি বরং সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়িয়েছে।
জলবায়ু ও অর্থনীতিতে পূর্বাভাস তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। চীনের কার্বন নিঃসরণ হয়তো সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে—২০২৫ সালের তথ্য সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে চীনের বিধিনিষেধ আরোপ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পশ্চিমা বিনিয়োগ নিয়ে বাজারের দোলাচলও অনুমানের সঙ্গে মিলেছে।
তবে মূল্যস্ফীতির লড়াই থেকে বাজেট ঘাটতির সংকটে মনোযোগ সরে এলেও ধনী দেশগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গেছে। এর ফলে ২০২৬ সালে বন্ডবাজার সংকটের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৫ সালে যে হিসাবনিকাশ চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার কথা ছিল, তা হয়তো শুধু পিছিয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে, গত বছরের পূর্বাভাস পুরোপুরি নিখুঁত না হলেও বড় প্রবণতাগুলো ধরতে পেরেছিলেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখার বিষয়—বিলম্বিত সেই হিসাবের নিষ্পত্তি নতুন বছরে হয় কি না।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/