কেমন যাবে নতুন বছর

সোনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়লেও কমতে পারে তেলের দাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১০ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
সোনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়লেও কমতে পারে তেলের দাম/ প্রতীকী ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

২০২০ সালের পর থেকে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে দেখা যাচ্ছে টানা উত্তেজনা। করোনাকালীন সরবরাহ বিঘ্ন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে চাহিদা ও সরবরাহে বড় দোলাচল দেখা গেছে গত কয়েক বছর। তবে ২০২৬ সালে সেই উত্তেজনা কাটিয়ে বাজারে একধরনের স্থিতি ফিরতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, পণ্যগুলোর ভবিষ্যৎ মূলত তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে উঠবে।

প্রথম ভাগে থাকবে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে, একই সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক মন্দাভাব চাহিদা কমিয়ে রাখবে। বিপরীতে সরবরাহ থাকবে তুলনামূলকভাবে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে নতুন প্রকল্প চালু হওয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। উষ্ণ জলবায়ুর কারণে ভয়ংকর শীতের আশঙ্কাও কমছে। পাশাপাশি ২০২৫ সালে গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের ভালো ফলনের কারণে বৈশ্বিক মজুত বেড়েছে।

এই শ্রেণির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হবে অপরিশোধিত তেল। রাশিয়ার তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ অবরোধ কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প জ্বালানির দাম কম রাখতে চাইবেন। ফলে উপসাগরীয় দেশগুলো উৎপাদন বাড়ালে বাজারে তেলের জোগান আরও বাড়তে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, দাম এতটাই কমে যাবে কি না, যাতে সস্তার সুযোগে চাহিদা আবার বাড়তে শুরু করে।

আরও পড়ুন>>
বছরজুড়ে অস্থিরতা, সোনার দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড
বিশ্ববাজারে সোনার দাম ফের বাড়লো
রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা: বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লো ৫ শতাংশ

দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে উচ্চ চাহিদার পণ্য—যার শীর্ষে সোনা। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক সংকট, বাণিজ্যিক ধাক্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০২৫ সালে আউন্সপ্রতি দাম চার হাজার ডলার ছাড়ালেও ২০২৬ সালে তা সাড়ে চার হাজার ডলার ছুঁতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা এই প্রবণতাকে আরও জোরদার করবে। এ অবস্থায় খুচরা বিনিয়োগকারী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক—দুই পক্ষই সোনা কেনা অব্যাহত রাখতে পারে। একই সঙ্গে রুপার চাহিদাও বাড়তে থাকবে।

তৃতীয় ভাগে রয়েছে শিল্পধাতু, যাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে পুরো পণ্যবাজার স্থিতিশীল থাকবে নাকি দরপতনের দিকে যাবে। এই ভাগের প্রধান সূচক তামা, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বাস্থ্যের পরিচায়ক হিসেবে ধরা হয়। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তামা আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। পরে শুল্ক কাঁচা তামার ওপর নয়, শুধু তামাজাত পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হবে—এ ঘোষণায় দাম কিছুটা নামলেও অনিশ্চয়তার কারণে আবার বেড়েছে। ২০২৬ সালেও তামার বাজার অস্থির থাকতে পারে।

পূর্বাভাস বলছে, শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে চাপে রাখবে। আবার, অনিশ্চয়তা মার্কিন ডলারকে শক্তিশালী করলে অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেনকারী শিল্পকারখানার ক্রয়ক্ষমতা কমতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমালে উল্টো প্রভাবও দেখা যেতে পারে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈশ্বিক বিক্রি দ্রুত বাড়লে ব্যাটারি, তার ও মোটরে ব্যবহৃত তামার চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে সরবরাহ বিঘ্ন বা নতুন প্রকল্প বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। চীনের কারখানাগুলো যদি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়, তাও বাজারে নতুন গতি আনতে পারে।

সব মিলিয়ে, ২০২৬ সালে পণ্যবাজারে উত্তেজনার বদলে বাস্তবতার কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। বিনিয়োগকারীদের চোখ থাকবে—তামাসহ শিল্পধাতু এ খাতকে দরপতনের ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে পারবে নাকি নতুন করে তলানিতে নামবে, তার দিকে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।