ভারতে দলিত যুবককে বিয়ে করায় ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বজনদের বিরুদ্ধে। ওই তরুণীকে তার বাবা ও আত্মীয়রা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত তরুণীর নাম মান্য ধোড্ডামানি। তার বয়স ২০ বছর। তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং স্বামী বিবেকানন্দ ধোড্ডামানির সঙ্গে বসবাস করছিলেন। গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) কর্ণাটকের ধরওয়াড় জেলার হুব্বল্লি তালুকের ইনাম বীরাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হুব্বল্লি গ্রামীণ পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মান্যার বাবা প্রকাশগৌড়া পাটিলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দুই অভিযুক্ত হলেন বীরানগৌড়া পাটিল ও অরুণগৌড়া পাটিল।
আরও পড়ুন>>ভারতে বাংলাদেশি সন্দেহে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যাভারতে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে সেনাসদস্য গ্রেফতারভারতে ভাড়ার টাকা চাইতে গিয়ে বাড়িওয়ালা খুনঅস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক হামলার সন্দেহভাজনরা ভারতীয়-অস্ট্রেলীয় নাগরিক
পুলিশ জানিয়েছে, মান্যা লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের ছিলেন, আর তার স্বামী বিবেকানন্দ তফসিলি জাতিভুক্ত। চলতি বছরের মে মাসে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই হুমকির মুখে ছিলেন এই দম্পতি। সে কারণে তারা ধরওয়াড় ছেড়ে হাভেরি জেলায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে মান্যা ও বিবেকানন্দের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রামে দেখা করা কঠিন হওয়ায় তারা মূলত ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ রাখতেন। পরে দুই পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে মে মাসে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে বিয়ে করেন। দুজনই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিয়ের পর মান্যার পরিবার বিবেকানন্দের বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানার পর পুলিশ উভয় পরিবারকে ডেকে সতর্ক করে এবং মান্যার বাবা-মা জানান, তারা মেয়েকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বর মান্যা ও বিবেকানন্দ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আবার ইনাম বীরাপুর গ্রামে ফেরেন। সন্তান জন্মের সময় হাসপাতালের ভর্তি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য আধার কার্ডসহ কিছু নথি সংগ্রহ করতেই তাদের এই ফেরা।
ঘটনার দিন মান্যা একটি খামারে কাজ করছিলেন। সেখানেই তার বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়রা লোহার পাইপ দিয়ে তাকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। এ সময় মান্যার শাশুড়ি রেণাভ্বা ও আত্মীয় সুভাষ তাকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়।
ধরওয়াড়ের পুলিশ সুপার গুঞ্জন আর্য গণমাধ্যমকে জানান, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হামলার খবর পাওয়া যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে হুব্বল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মান্যা মারা যান।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানা গেছে, হামলার সময় আরেকদল অভিযুক্ত বিবেকানন্দকেও আক্রমণের চেষ্টা করে। তিনি তখন তার ভাইয়ের সঙ্গে বাইরে ছিলেন। কোনোভাবে পালিয়ে গিয়ে তিনি থানায় আশ্রয় নেন।
হুব্বল্লি গ্রামীণ পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার পেছনের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকেএএ/