অনিয়মের মাধ্যমে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগ ও ৩১ শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম মামলায় রাশেদ খান মেনন ও ১৩ শিক্ষক সহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় মামলায় মেনন ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরে গত বছরের ২২ আগস্ট বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আওয়ামী লীগ আমলে রাশেদ খান মেনন প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এবং পরে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
প্রথম মামলা অভিযোগে বলা হয়, অনিয়ম ও প্রতারণার আশ্রয়ে উদ্দেশ্যমূলক ও পরিকল্পিতভাবে সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে শুধু পূর্বপরিচিত ১৩ জন প্রার্থীকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
বিধি অনুযায়ী বিশেষ গভর্নিং কমিটির নিয়োগ দানের কোনো ক্ষমতা না থাকা, নিয়োগ বোর্ডে কোনো ডিজি/ডিজির প্রতিনিধি ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না রাখা, প্রার্থীদের বিজ্ঞাপনে চাওয়া এনটিআরসি সনদ না থাকা, টেবুলেশন শিটে লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরধারীকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সুযোগ না দেওয়া, নিয়োগ সংক্রান্ত টেবুলেশন শিট তৈরির আগেই অর্থাৎ নিয়োগ পরীক্ষা পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই নিয়োগপত্র/যোগদানপত্র ইস্যু করা ইত্যাদি নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রাশেদ খান মেননসহ অভিযোগসংশ্লিষ্ট ২০ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক এমপি রাশেদ খান মেনন, স্কুলটির সাবেক অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য সচিব লে. কর্নেল (অব.) আলমগীর হোসেন। এছাড়া গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ডা. মাহবুব উর রহমান, মো. আবুল হোসেন, মীর মোশাররফ হোসেন, জহিরুল ইসলাম খানকেও আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রভাষক শ্যামলী হোসেন, মাহমুদা সুলতানা, আয়শা সিদ্দিকা, নাসরিন আফরোজ, মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, তুহিন বিশ্বাস, মোহা. বজুলর রহমান, মো. রাসেল, মো. হারুন-অর-রশিদ খান, মো. মোশারফ হোসেন, উৎপল বিশ্বাস, এ কে এম মাসুদ রানা ও মো. আরিফুল ইসলাম।
দ্বিতীয় মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল তাতে এমপিওভূক্ত বেসরকারি স্কুলের চাকরিবিধি প্রযোজ্য হবে মর্মে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এমপিওভূক্ত বেসরকারি স্কুলের চাকরিবিধি অনুযায়ী স্কুল শাখায় নিয়োগকৃত একজন শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে সর্বোচ্চ সিনিয়র শিক্ষক হতে পারেন। তাদের প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতির কোনো সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও আলোচ্য ক্ষেত্রে ৩১ জন শিক্ষকের যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, আইন/বিধিগতভাবে তার স্বীকৃতি নেই। এক্ষেত্রে, অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এসব শিক্ষককে। এ অভিযোগে মেননসহ অভিযোগসংশ্লিষ্ট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক এমপি রাশেদ খান মেনন ও স্কুলটির সাবেক অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য সচিব লে. কর্নেল (অব.) আলমগীর হোসেন। এছাড়া গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ডা. মাহবুব উর রহমান, মো. আবুল হোসেন, মীর মোশাররফ হোসেন, জহিরুল ইসলাম, শ্যামলী হোসেন খানকেও আসামি করা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছেন কলেজ প্রভাষক মাহবুব আলম বাচ্চু, মো. গোলাম মোস্তফা, নিলুফার ইয়াসমিন, শাহ মো. জুয়েল রেজা, মো. আজগর আলী, গাজী আবুল বাশার, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আইনুন নাহার, মমতাজ বেগম, জন ফ্লেরিয়ান গোমেজ, নাসিমা বেগম, হিমানী সেন, কামরুন নাহার, মো. আব্দুল আজিজ, মনিরুজ্জামান, তাকসিনা আক্তার বানু, সাবিনা নাজনীন, মো. দাউদ ইকবাল, শাহীন বেগম, মো. সাজ্জাদ হোসেন, সুকান্ত চন্দ্র সাহা, তাহমিনা ইয়াসমিন, ইসমত আরা ফারুক, মারুফা সুলতানা, ফারহানা রহমান, হাবিবা আক্তার খানম, আযীমুন নাহার, সৈয়দা ফাহিমা বেগম, এইচ.এম গিয়াস উদ্দিন ও রওশন আরা তানজিম।
এসএম/ইএ/জেআইএম