অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গঠন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ‘ইক্যুইট্যাবল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ হেলথ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফর পারসন্স উইথ ডিজ্যাবিলিটি (ইআইএইচআরপিডি)’ প্রকল্প।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে দাতা সংস্থা সিবিএম গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি ইনক্লুসনের সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ জেলার সদর, ঘিওর, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড-সিআরপি।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকার বনানীতে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক, সাফল্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবনমান উন্নয়নে পুনর্বাসন সেবার তাৎপর্য তুলে ধরেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পিছিয়ে রেখে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠন ওপিডিকে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন অনেক সহযোগিতা করেছে। তবে, প্রকল্প শেষ মানেই কাজ শেষ নয়, বরং প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠনের (ওপিডি) সদস্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান সিআরপির সিস্টেমেটিক কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশংসা করেন। এ ধরনের প্রকল্পের রেপ্লিকেশন জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি। রোবোটিক সেবা না দিয়ে, মানবিক সেবাদানের আহ্বানও জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারকেও এতে ভূমিকা রাখতে হবে।
সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার সানজীদা সুলতানা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সিআরপি পথপ্রদর্শক। আর সিবিএমের ম্যান্ডেট হচ্ছে ওপিডিকে ক্ষমতায়িত করা, তাদের মূলধারায় নিয়ে আসা। এই প্রকল্পের এক্সিট পয়েন্ট হচ্ছে ওপিডির ক্ষমতায়ন। ওপিডি ক্ষমতায়িত হয়েছে মানেই প্রকল্প সফল। সকল অংশীদারদের ওপিডিগুলোকে নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল বাতেন বলেন, সিআরপি অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে এই প্রকল্প করেছে। মানিকগঞ্জে আমরা সিআরপিকে পেয়ে খুশি। আমরা সর্বদা এখানে ইনভলভড ছিলাম। আমাদের নিয়ে সময়ে সময়ে তারা কর্মসূচি পালন করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রফেসর ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংসদে আপনাদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে, আপনাদের জন্য আলাদাভাবে ‘প্রতিবন্ধী সুরক্ষা মন্ত্রণালয়’ থাকতে হবে।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের পরিচালক (পরিঃ উন্নঃ ও তথ্যপ্রযুক্তি) ও যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমা বলেন, সরকার বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু সেটাও অপ্রতুল। আমরা আশা করি সরকারের ইতিবাচক দিকনির্দেশনায় সব পুনর্বাসন সেবাই নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্পের অন্যতম সফলতা হিসেবে মানিকগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির রোগীদের জন্য চালু হয়েছে এসসিআই ইউনিট, যেখানে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসন সেবা তথা, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এসসিআই ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছে জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্যপেশাজীবীরা। দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন সহায়ক সামগ্রী, যেমন- হুইল চেয়ার, সাপোর্টিভ সিটিং, কৃত্রিম অঙ্গসংযোজন ইত্যাদি সেবা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।
প্রকল্প এলাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত চারটি সংগঠনের সক্ষমতা বাড়াতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আয়-বর্ধক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সংগঠনগুলোকে স্বাবলম্বী করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।
এই প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত ‘বাংলাদেশে মেরুরজ্জুর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক গবেষণা কার্যক্রম।
এসইউজে/এমআরএম/জেআইএম