কৃষি ও প্রকৃতি

কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলেও ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো রোগ ও ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করতে না পারলে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের আর্থিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রচলিত পদ্ধতিতে রোগ শনাক্তকরণ সাধারণত কৃষি বিশেষজ্ঞের ওপর নির্ভরশীল, যা সময়সাপেক্ষ এবং সব অঞ্চলে সহজলভ্য নয়। এ প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাময় সমাধান হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।

এআই-ভিত্তিক প্রযুক্তি যেমন মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং এবং কম্পিউটার ভিশন ব্যবহার করে ফসলের পাতার ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে রোগ ও পোকামাকড় শনাক্ত করা সম্ভব। স্মার্টফোন বা ড্রোনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ছবির ওপর ভিত্তি করে এআই সিস্টেম রোগের ধরন নির্ধারণ করতে পারে এবং উপযুক্ত প্রতিকার বা কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারে। ফলে কৃষকেরা কম খরচে, কম সময়ে এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হন। সুতরাং কৃষিতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্ষতি হ্রাস এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিবর্তমানে বাংলাদেশের কৃষিখাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এর একটি বাস্তব ও কার্যকর উদাহরণ হলো ডা. চাষি অ্যাপ, যা কৃষকদের জন্য ডিজিটাল কৃষি সহায়তা নিশ্চিত করছে। এটি বাংলাদেশের কৃষিতে মাঠ পর্যায়ে ব্যবহৃত সর্বপ্রথম এআই প্রযুক্তির মোবাইল অ্যাপ। এ অ্যাপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো: > তাৎক্ষণিক, রিয়াল টাইম রোগ ও পোকামাকড় শনাক্তকরণ এবং সমাধান। > জৈব ও রাসায়নিক সমাধানের সুপারিশ। > আবহাওয়ার পূর্বাভাস। > ফসল ও লোকেশন বেইজ সারব্যবস্থাপনা। > ই-কমার্স এবং ট্রেনিং ও পরামর্শ সেবা প্রদান করা। বর্তমানে এ অ্যাপের মোট সাধারণ ব্যবহারকারী প্রায় ৮৭ হাজার। এর মধ্যে ৩০% (প্রায় ২৫,৮০০ জন) সরাসরি কৃষক। এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৭% ছাত্র ও তরুণ-তরুণী, ৭% বিজ্ঞানী ও কৃষি পেশাজীবী এবং বাকি ২৬% অন্যান্য শ্রেণির মানুষ। এ পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, অ্যাপটি শুধু কৃষকদের মধ্যেই নয় বরং নতুন প্রজন্ম ও পেশাজীবীদের মাঝেও ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। উৎপাদনশীলতা ও খরচ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনপরিবেশ রক্ষায় সময়ের অপরিহার্য আহ্বান কাঠঠোকরা পাখির অজানা কাহিনি 

কৃষিতে প্রযুক্তির প্রভাবকৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। আপনি মাঠ ফসল এবং ছাদ বাগানের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ে চিন্তিত? কৃষকের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এআই প্রযুক্তি ভিত্তিক অ্যাপটি ডিজিটাল ফার্মিং সিস্টেম। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়: কৃষক অ্যাপটি ব্যবহারের ফলে ফসলের ফলন ১২-১৬% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কীটনাশকের ব্যবহার ২৫-৩০% কমেছে। সারের ব্যবহার প্রায় ১১% হ্রাস পেয়েছে। সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৩৩%। অর্জনগুলো প্রমাণ করে যে এআই-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত সহায়তা ব্যবস্থা কৃষকদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় খরচ ও ঝুঁকি কমছে।

প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে যুবসমাজের সম্পৃক্ততাঅ্যাপ ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, কৃষকদের উৎসাহ ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির পাশাপাশি ইন্টারনেট অব থিংস ভিত্তিক সয়েল সেন্সর, স্প্রে ড্রোন এবং অন্যান্য স্মার্ট কৃষিপ্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করছেন। ফলে কৃষিকে তারা একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও লাভজনক পেশা হিসেবে দেখছেন, যা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।

সার্বিকভাবে বলা যায়, অ্যাপটি বাংলাদেশের কৃষিতে এআই প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের সফল মডেল। একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি ও খরচ কমাতে সহায়তা করছে; অন্যদিকে নতুন প্রজন্মকে কৃষিতে আকৃষ্ট করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহার টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে।

এসইউ