পরিবেশ রক্ষায় সময়ের অপরিহার্য আহ্বান

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ফয়সাল হাবিব

পরিবেশ সংরক্ষণ কেবল একটি ধারণা নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য দায়বদ্ধতা। জেমস অডুবনের ভাষায়, ‘একজন সত্যিকারের সংরক্ষণবাদী এমন এক ব্যক্তি, যিনি জানেন পৃথিবী তার পিতার দ্বারা দেওয়া হয়নি কিন্তু তার সন্তানদের কাছ থেকে ধার করা হয়েছে।’

পরিবেশ সংরক্ষণের কেন্দ্রে আছে শিক্ষা ও সচেতনতা। ১৯৭৭ সালের টিবিলিসি ঘোষণায় পরিবেশ শিক্ষার পাঁচটি মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে: সচেতনতা বৃদ্ধি, জ্ঞান অর্জন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে জাতীয় পাঠ্যক্রমে পরিবেশ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা ভাবনার বিষয়।

ঢাকা শহরের রাস্তায় হাঁটলেই বায়ুদূষণের মাত্রা হৃদয়ঙ্গম করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখো মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্মাণ কাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণের অভাব, নির্বিচারে গাছ কাটা ও পুরোনো যানবাহনের বিষাক্ত গ্যাস নগরীর বায়ুকে প্রতিদিনই প্রাণঘাতী করে তুলছে। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুরবস্থা মাটি ও পানিদূষণকে ত্বরান্বিত করছে। প্রকৃতির প্রতি আমাদের এই উদাসীনতা একটি আমেরিকান প্রবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়: ‘যেদিন সর্বশেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে... সেদিন আমরা বুঝতে পারবো, টাকা খেয়ে বেঁচে থাকা যায় না’।

বাংলাদেশ তারুণ্যের দেশ। প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী এ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। এই বিশাল জনশক্তি যদি পরিবেশ সচেতনতায় সক্রিয় হয়, তবে পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশগুলো তুলে ধরেছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ:

পরিবেশ ক্লাব গঠন: দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ক্লাব গঠন করতে হবে। স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন
কৃষির নতুন দিগন্ত সয়েল সেন্সর
খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত মাগুরার গাছিরা

ইকো-প্রেনিউরশিপে উৎসাহ: তরুণ উদ্যোক্তাদের ‘ইকোপ্রেনার’ হতে উৎসাহিত করতে হবে। সবুজ প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে তারা টেকসই অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে এরই মধ্যে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে, যা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

অনলাইন শিক্ষার প্রসার: পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় তরুণদের জন্য সহজবোধ্য অনলাইন কোর্স চালু করতে হবে, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক পরিবেশগত সমস্যা বুঝতে ও সমাধানে সাহায্য করবে।

প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান: নগর পরিকল্পনায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ পাহাড় ও হাওর অঞ্চল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮’-এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সুনামগঞ্জের তরুণ সালেহিন চৌধুরীর গল্প আমাদের আশাবাদী করে। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের টিলাকে পাখি ও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমে পরিণত করেছেন। এটি প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি ব্যক্তি ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেও প্রকৃতি রক্ষা সম্ভব। মিরসরাইয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা বনও একইভাবে অনুপ্রেরণাদায়ী।

পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে আমরা সময় ফিরিয়ে দিতে পারি না, কিন্তু ভবিষ্যৎ গড়তে পারি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশের সুরক্ষা পরস্পরবিরোধী নয়; এ দুটিকে সমন্বয় করেই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশগত শিক্ষা, তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ঐকান্তিকতা এবং আমাদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশবান্ধব চর্চাই পারে আমাদের ফুসফুসে বিশুদ্ধ বাতাস, নদীতে স্বচ্ছ পানি এবং একটি বসবাসযোগ্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।

আসুন, জেমস অডুবনের দর্শনকে হৃদয়ে ধারণ করি। আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে ধার করা পৃথিবীটি রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।

লেখক: প্রভাষক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাঞ্ছারামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।