দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ৭ ডিসেম্বর নতুন করে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়ায় কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড। ১৭ দিন পর এ সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে চার দিনের বৈঠক শুরু করেছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুই দেশের কর্মকর্তারা থাইল্যান্ডের চান্থাবুরি প্রদেশে অবস্থিত একটি সীমান্ত চেকপোস্টে এই আলোচনা শুরু করেন বলে জানিয়েছে কম্বোডিয়ার সরকার। এই আলোচনা আগামী শনিবার ( ২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়েছে।
চলতি মাসে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ আবারও তীব্র আকার ধারণ করে। এর ফলে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক এ সংঘর্ষে ৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
তবে বৈঠক শুরুর আগেই এ আলোচনা বৈঠক বেশ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে্ছিল। কারণ কম্বোডিয়া নিরপেক্ষ কোনো স্থানে বৈঠক আয়োজনের দাবি জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সব জটিলতা কাটিয়ে থাইল্যান্ডেই আলোচনা শুরু হয়। কম্বোডিয়ার সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে দুই দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদলকে একটি সাধারণভাবে সাজানো বৈঠক কক্ষে বসে আলোচনা করতে দেখা যায়।
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে এই বৈঠক ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তবে আলোচনার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে কম্বোডিয়ার পক্ষের বক্তব্য ও কার্যক্রমে আন্তরিকতার ওপর।এছাড়া কম্বোডিয়াকে প্রথমে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সীমান্ত এলাকায় পুঁতে রাখা স্থলমাইন অপসারণে সহযোগিতা করার দাবি জানিয়েছে থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দল।
এদিকে সীমান্তে এখনো মাঝে মাঝে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেলেও কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আশাবাদী যে থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতি কার্যকরে আন্তরিকতা দেখাবে।
এই সংঘাতের মূল কারণ দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখা যা ঔপনিবেশিক আমলে নির্ধারিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি প্রাচীন মন্দিরের মালিকানা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক প্রেহা ভিহার মন্দির এই বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
গত ৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর দুই দেশই একে অপরকে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য দায়ী করেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে পাঁচ দিন ধরে চলা সংঘর্ষে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার পর উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকায় হামলার অভিযোগ তোলে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। তবে সেই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
সূত্র : এএফপি
কে এম