যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন করায় কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
এসময় নেতাকর্মীরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভ চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানবো না’, ‘জোটের প্রার্থী মানি না, মানবো না’- এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।
নেতাকর্মীরা জানান, মনোনয়ন পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। বিএনপির ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। পুনরায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে আসনটিতে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে জোটের শরিক দলকে ছাড় দিয়ে এসেছে। এবার প্রাথমিকভাবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রদান করা হয়। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। প্রার্থী শহীদ ইকবালও নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি মাঠে নেমে পড়েন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত বুধবার দুপুরে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন করে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী বদলের ঘোষণায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাথায় বজ্রাঘাত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন থেকে আসা নেতাকর্মীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা কাফনের কাপড় পরে সড়কের ওপর বসে পড়েন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দলের শীর্ষনেতারা তাদের উঠিয়ে দিলে যানজট স্বাভাবিক হয়।
মণিরামপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী হামলা, মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১৫ জন নেতা হত্যার শিকার হয়েছে। সেই দুর্দিনে কোনো শরিক দলের নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন দলের সুসময় এসেছে। বারবার নির্যাতিত হয় বিএনপি নেতাকর্মীরা; আর সংসদ নির্বাচনের সময় মনোনয়ন দেওয়া হয় শরিক দলকে।
তিনি বলেন, বারবার আমরা আসনটিকে বর্গা দিতে চাই না। বারবার আসনটি শরিকদের ছেড়ে দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ। ফলে এই নেতাকর্মীদের জোটের শরিকের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো কীভাবে সম্ভব হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এজন্য নেতাকর্মীরা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন। এখন রাজপথেও নেমেছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।
মনোনয়নবঞ্চিত শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বিক্ষোভ মিছিলে ছিলেন না। তবে তিনি মুঠোফোনে জানান, ‘কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে এই সিদ্ধান্তে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য তারা বিক্ষোভ করছেন।’
তবে নতুন মনোনীত প্রার্থী মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাস জানিয়েছেন, ‘যেহেতু প্রাথমিক একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার পর প্রার্থীর পরিবর্তন হয়েছে, সেক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষোভ হতাশা থাকবেই। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করেন। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তারা তার সঙ্গে থাকবেন। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে নামবেন।’
মিলন রহমান/এফএ/এএসএম