জাতীয়

মিরপুরে ৭ মাসে ১৬২০ মামলা, বেড়েছে মাদক-চুরি-নারী নির্যাতন

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় এক হাজার ৬২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট তিন হাজার ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সাত মাসে সবচেয়ে বেশি ৫৫০টি মামলা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। ১৫৫টি চুরি, ১০৯টি নারী ও ৫২টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে।

জখমের ঘটনায় ৮৬টি, হত্যায় ৫৩টি, ধর্ষণে ৪৭টি, দস্যুতায় ৩১টি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৩টি এবং অন্যান্য অভিযোগে ৫১৪টি মামলা হয়েছে।

মিরপুর বিভাগে সাতটি থানা

ডিএমপির মিরপুর বিভাগে সাতটি থানা আছে। এগুলো হলো মিরপুর মডেল থানা, পল্লবী থানা, কাফরুল থানা, শাহ আলী থানা, দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানা ও ভাষানটেক থানা।

সাত মাসে যত মামলা ও গ্রেফতার

জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ডিএমপির মিরপুর বিভাগে মোট এক হাজার ৬২০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ২৩১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২০৯টি, মার্চে ২৪২টি, এপ্রিলে ২৪০টি, মে মাসে ২৪০টি, জুনে ২১৭টি ও জুলাইয়ে ২৪১টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট তিন হাজার ৩২ জনকে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৪৩০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৩ জন, মার্চে ৫২৫ জন, এপ্রিলে ৪৯৫ জন, মে মাসে ৪২৬ জন, জুন মাসে ৩৩৮ জন ও জুলাই মাসে ৩৮৫ জন গ্রেফতার হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫৫০ মামলা

মিরপুর বিভাগের সাত থানায় সাত মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫৫০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৮৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৬০টি, মার্চে ৭৯টি, এপ্রিলে ৭৪টি, মে মাসে ৭৭টি, জুনে ৮৭টি ও জুলাইয়ে ৮৭টি মামলা হয়েছে।

এছাড়া চোরাচালানের ঘটনায় এপ্রিল ও মে মাসে একটি করে দুটি মামলা হয়েছে।

চুরির ঘটনায় ১৫৫ মামলা

ডিএমপির মিরপুর বিভাগে চুরির ঘটনায় সাত মাসে ১৫৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সিঁধেল চুরির ঘটনায় জানুয়ারিতে সাতটি, ফেব্রুয়ারিতে আটটি, মার্চে আটটি, এপ্রিলে ছয়টি, মে মাসে দুটি, জুনে ছয়টি ও জুলাইয়ে ১১টিসহ মোট ৪৮টি মামলা হয়েছে।

অন্যান্য চুরির ঘটনায় জানুয়ারিতে ১১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি, মার্চে ২১টি, এপ্রিলে ১৯টি, মে মাসে ১৭টি, জুনে ১০টি ও জুলাইয়ে ১৭টিসহ মোট ১০৭টি মামলা হয়েছে।

নারী নির্যাতনের ঘটনায় ১০৯ মামলা

নারী নির্যাতনের ঘটনায় সাত মাসে ১০৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি, মার্চে ১৯টি, এপ্রিলে ২২টি, মে মাসে ১৯টি, জুনে ১২টি ও জুলাইয়ে নয়টি মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

২০ টাকার নোটও জাল, মিরপুরে প্রিন্টারসহ যুবক গ্রেফতারমিরপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলিতে যুবক নিহত

জখম সংক্রান্ত ৮৬ মামলা

ডিএমপির মিরপুর বিভাগে সাত মাসে জখম সংক্রান্ত ৮৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে আটটি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি, মার্চে নয়টি, এপ্রিলে ১৭টি, মে মাসে ১৫টি, জুনে ১০টি ও জুলাইয়ে ১৪টি।

৫৩টি হত্যা মামলা

জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির মিরপুর বিভাগে খুনের ঘটনায় ৫৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি, মার্চে সাতটি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে ১০টি, জুনে সাত ও জুলাইয়ে ১২টি মামলা হয়েছে।

আলোচিত যত খুন

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সিরামিক রোডে একই গ্রুপের অন্তঃকোন্দলের জেরে মো. বাবু ওরফে ব্লেড বাবুকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ বিষয়ে পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাবাহ জানান, ব্লেড বাবু নিজেই সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, হত্যা, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অভিযোগে রয়েছে একাধিক মামলা। তার গ্রুপের মধ্যে ওইদিন অন্তঃকোন্দল দেখা দেয়।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এসআই আবু সাবাহ বলেন, অন্তঃকোন্দলের জেরে ২০ জানুয়ারি বিকেলে পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিক রোডের বঙ্গবন্ধু কলেজের পাশে নতুন রাস্তার মুখে চাপাতি, সুইচ চাকু ও ইট দিয়ে থেঁতলে ব্লেড বাবুকে হত্যা করে গ্রুপের অন্যরা।

এরপর ১৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহ আলী থানা এলাকার রাসেল পার্কের সামনে মো. স্বপন (৩০) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ১০ থেকে ১২ জন। পূর্বশত্রুতার জেরে তিনি খুন হয়েছেন বলে ওই সময় প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ।

জুনের ১০ তারিখ সকালে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্প এলাকা থেকে রকিবুল হাসান ওরফে পেপার সামি (২৫) নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক বেচাকেনা নিয়ে বিরোধের জেরে রকিবুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে। মাদকের মামলায় জেল খেটে এর আগে তিনি জামিনে বের হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

মিরপুরে শতাব্দী পরিবহনের বাসে আগুনমিরপুরে মাদকবিরোধী অভিযান, বিভিন্ন মেয়াদে ২৩ জনকে সাজামিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনতাই

এ বছর আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মিরপুরে দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যা। গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, কিবরিয়া ওই দোকানে ঢোকার দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে কয়েকজন দুর্বৃত্ত দোকানে ঢুকে তাকে গুলি করতে শুরু করে। দুর্বৃত্তদের একজনের পরনে পাঞ্জাবি ও দুজনের শার্ট ছিল। প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট ও মুখে মুখোশ ছিল।

শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৫২ মামলা

ডিএমপির মিরপুর বিভাগে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে সাতটি, মার্চে সাতটি, এপ্রিলে আটটি, মে মাসে আটটি, জুন মাসে নয়টি ও জুলাই মাসে নয়টি মামলা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় ৪৭ মামলা

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির মিরপুর বিভাগে নারী নির্যাতন মামলার তথ্যে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় জানুয়ারিতে তিনটি, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি, মার্চে ছয়টি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে নয়টি, জুনে সাতটি ও জুলাই মাসে ১০টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ, সাত মাসে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪৭টি।

অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ফেব্রুয়ারি মাসে একটি মামলা হয়েছে।

দস্যুতার ঘটনায় ৩১ মামলা

জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দস্যুতার ঘটনায় ৩১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে সাতটি, ফেব্রুয়ারিতে তিনটি, মার্চে পাঁচটি, এপ্রিলে সাতটি, মে মাসে চারটি, জুনে চারটি ও জুলাই মাসে একটি মামলা হয়েছে।

অস্ত্র উদ্ধারে ২৩ মামলা

অস্ত্র উদ্ধারজনিত কারণে মামলার তথ্যে বলা হয়, অস্ত্র আইনে জানুয়ারিতে একটি, ফেব্রুয়ারিতে চারটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে দুটি, মে মাসে ১১টি ও জুলাই মাসে চারটিসহ মোট ২৩টি মামলা হয়েছে।

এছাড়া বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে জানুয়ারি মাসে দুটি, মার্চে একটি ও এপ্রিলে দুটিসহ মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে।

মিরপুর বিভাগে জানুয়ারি মাসে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা হয়। জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দাঙ্গা সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়নি।

সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ মামলা

সাত মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০টি মামলা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি, ফেব্রুয়ারিতে দুটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে চারটি, মে মাসে তিনটি, জুনে পাঁচটি ও জুলাইয়ে চারটি।

অপহরণের মামলা ১৪টি

অপহরণের ঘটনায় জানুয়ারিতে একটি, ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে তিনটি, মে মাসে দুটি, জুনে তিনটি ও জুলাইয়ে তিনটি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ, সাত মাসে মোট ১৪টি মামলা হয়েছে।

চোরাচালান ব্যতীত বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে একটি ও মে মাসে পাঁচটি।

পুলিশ আক্রান্তে ৬ মামলা

ডিএমপির মিরপুর বিভাগে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে দুটি, এপ্রিলে একটি ও জুনে দুটি।

গত ১২ জুন বেলা ১১টার দিকে পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান মিরপুর-৬ নম্বর সেকশন কাঁচাবাজারে যান। এ সময় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে মারধর করে মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেন। খবর পেয়ে মিরপুর থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থল পল্লবী থানার আওতায় হওয়ায় পরে তাদের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে।

আরও যেসব মামলা

অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে একটি, মে মাসে একটি ও জুলাইয়ে একটি।

ডাকাতির ঘটনায় জানুয়ারিতে একটি, মে মাসে একটি, জুনে দুটি এবং জুলাইয়ে একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে।

অন্যান্য ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ৭৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৭২টি, মার্চে ৭৩টি, এপ্রিলে ৫৮টি, মে মাসে ৫৫টি, জুন মাসে ৫৩টি ও জুলাই মাসে ৫৮টিসহ মোট ৪৪৭টি মামলা হয়েছে।

যা বলছে পুলিশ

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আযম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন আমাদের টহল টিম কাজ করে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা টিম রয়েছে। পেট্রোলিং গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন ভোকাল পয়েন্টে আমাদের ফোর্স দায়িত্ব পালন করে। টহল ডিউটির মাধ্যমে সন্দেহভাজন মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।’

দারুস সালাম থানার ওসি এস এম জাকারিয়া বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের বহুমুখী প্রচেষ্টা আছে। অপরাধপ্রবণ এলাকায় সবসময় আমাদের মোবাইল টিম থাকেই। এছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে কোনো সংবাদ এলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। আমাদের নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধীদের ধরতে কাজ করে। যেখানে অপরাধ সংগঠিত হয় সেখানে তাৎক্ষণিক অভিযান দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।’

‘এর বাইরেও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আছে সেটার ব্যাপারেও আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসি। সব মিলিয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।’ বলছিলেন ওসি এস এম জাকারিয়া।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মাদকবিরোধী অভিযান, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেট্রোলিং টিম নিয়মিত মাঠে কাজ করছে।’

অপরাধ বাড়ার কারণ

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পরিসংখ্যানিকভাবে যে অপরাধের সংখ্যা দেখছি তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। স্পষ্ট বলা যায় পরিসংখ্যানের মধ্যে যে, অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। অপরাধের সংখ্যা বাড়লে অভিযুক্তের সংখ্যাও বাড়বে।’

গত সাত মাসে পুরো ঢাকা শহরে যে অপরাধ ঘটেছে সেগুলো আসলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন করলে তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ কেন পারছে না? এই না পারার জায়গায় আমরা কিছু বিষয় দেখি। প্রথমত এখনো বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজেরাই কিন্তু আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্নভাবে তাদের ওপর আক্রমণ করা, মানসিকভাবে হেয় করা, অসম্মানজনক শব্দ করা। এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি যখন পুলিশ নিজেরা হবে তখন তাদের মনোবল হারিয়ে যাচ্ছে। এই সাত মাসে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।’

‘দ্বিতীয়ত হচ্ছে পুলিশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। সমন্বয়হীনতা এমন যে মাঠের অপরাধ পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করার জন্য যে ধরনের সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা দরকার পুলিশ সেটি করতে পারছে না। কারণ মাঠের পুলিশের সঙ্গে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের পুলিশের একটা সমন্বয়হীনতা আছে। এখানে যথেষ্ট আস্থার সংকটও আছে। আস্থার সংকটটা এমন যে, মাঠের পুলিশরাই সাধারণত উচ্চ পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে। কিন্তু মাঠের পুলিশ যখন কোনো আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে বিপদে পড়ে, আক্রমণের মধ্যে পড়ে, অনিরাপদ কোনো পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, তখন পুলিশ কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি পুলিশের দায় কিংবা তাকে বদলি করে দেয়। কখনো মামলা গ্রহণ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও তার দায় নিতে চায় না। এ প্রসঙ্গগুলো অতীতে লক্ষ্য করেছি এখনো সেটা আছে।’

তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের উচিত পুলিশের নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করে হারানো মনোবল পুনরুদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া। আর এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তার সক্ষমতার বিকাশের ব্যবস্থা করা।’

‘আইনের মধ্যে থেকে জোরালোভাবে আইন প্রয়োগ করে, অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই’ বলেও জানান এ অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

কেআর/এএমএ/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস