যশোরের শার্শা উপজেলায় সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। হলুদ রাজ্যে মুখরিত মৌমাছির দল। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের অপরূপ দোলাচালে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। এ যেন ফসলের মাঠ নয় বরং কৃষকের স্বপ্নের রাজ্য।
একসময় অব্যাহত লোকসান গুনতে থাকায় সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন চাষিরা। এখন স্বপ্ন দেখছেন বাম্পার ফলনের। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী তারা। বিনা মূল্যে পাওয়া উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার ফলনে কৃষকের প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, শার্শা উপজেলায় গত বছর প্রায় ৫ হাজার ৯২৯ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৮ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন। যা হেক্টরপ্রতি ১.৫১ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকেরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ বছর ৬ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এখনো অনেকে চাষ করছেন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হবে বলে ধারণা করা হয়।
ফলে এ বছর উপজেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবার উপজেলার ১ হাজারের বেশি কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। আগামীতে এ জাতের সরিষা চাষে কৃষকেরা আরও আগ্রহী হবেন। তবে শুধু ধান চাষ করলে হবে না। পাশাপাশি ভুট্টা, সরিষা, আলু, সূর্যমুখী ফুল, পাট, তিলসহ অন্য ফসল চাষের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ার আশা কৃষকদের। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আগামীতে আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে শার্শা, বাগআঁচড়া, বেনাপোল, পুটখালি, বাহাদুরপুর, নিজামপুর, ডিহি, লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক ৫ থেকে ৬ বিঘা করে জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন।
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে পেঁয়াজের চারা রোপণ শুরু, লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার টন ফেনীতে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯-১০ জাতের সরিষা চাষ করা উপজেলার শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতি বিঘা সরিষা চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। বাজারে চাহিদা ভালো থাকে এবং দাম ভালো পাওয়া যায়। বর্তমান সরিষার গাছ, ফুল-ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের মতো লাভবান হতে পারবো।’
বালুন্ডা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘সরিষার চাহিদা ভালো থাকায় এবং চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকায় প্রতি মৌসুমে সরিষার চাষ করি। আশা করছি এবারও দাম ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকে পড়বেন।’
বেনাপোলের নারায়ণপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বারি-১৪ জাতের সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর একই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার ২ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষা আবাদ করেছি।’
গোগা গ্রামের নাজমুল বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এ বছর নতুন সরিষা চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বারি-১৪ বীজ সংগ্রহ করে ২ একর জমিতে রোপণ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা গাছ ও ফুল দেখে বোঝা যাচ্ছে, এ বছর দ্বিগুণ ফলন হবে। বাজারে দামও পাওয়া যাবে বেশি। তাই আমন ধান কাটার পরপরই জমিতে সরিষা চাষ করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় বারি-৮, বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪, বিনা-৯ বীজ সরবরাহ ও বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ভালো আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
মো. জামাল হোসেন/এসইউ