সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় টেকসই পরিকল্পনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের কার্যপরিধি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা নিয়ে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সদস্যদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। পরিকল্পনা কমিশনের নাজিয়া সালমা ভবনের অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠান হয়।
সরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো টেকসই পরিকল্পনা থাকে না উল্লেখ করে সচিব বলেন, বর্তমানেও বিমা করপোরেশন বা বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠান নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকল্পের মাধ্যমে সাময়িকভাবে অর্থায়ন করে প্রতিষ্ঠানকে কিছুটা সচল করা হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষ হলেই প্রতিষ্ঠানটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এর মূল কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদে কার্যক্রম চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো টেকসই পরিকল্পনা থাকে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দরকার টেকসই পরিকল্পনা।
শাকিল আখতার আরও বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ। ফলিত অর্থনীতি পড়ার সময় আমরা শিখেছি কীভাবে লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক সংস্কারের মাধ্যমে লাভজনক করা যায়। কিন্তু বাস্তবে সেই শিক্ষা প্রয়োগ করার মতো সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার আগে সেটিকে সংস্কারের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার সুযোগ ছিল, কিন্তু সে পথে আমরা যাইনি।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, স্বচ্ছতা ও কাজের পদ্ধতির বিষয়ে আমি সব সময় একটি নীতি মেনে চলি। কোনো প্রস্তাব সম্ভব হলে আমি স্পষ্টভাবে ‘হ্যাঁ’ বলি, আর সম্ভব না হলে সরাসরি ‘না’ জানিয়ে দিই। কাউকে মাঝপথে ঝুলিয়ে রাখা বা অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা আমার অভ্যাস নয়। আপনাদের রিপোর্টিং বা কাজের ক্ষেত্রে যেন কোনো ভুল না থাকে, সেজন্য আপনারা প্রকল্প প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সেই লক্ষ্যেই আজকের এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। আপনারা যে অন্যান্য দাবি-দাওয়া দিয়েছেন, সেগুলো নিয়েও আমি কাজ করছি। খুব শিগগিরই আপনারা জানতে পারবেন, কোন কোন বিষয় আমি বাস্তবায়ন করতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্প গ্রহণের সময় আমরা মনোযোগী হয়ে থাকি কিন্তু বাস্তবায়নে সেইভাবে মনোযোগী হই না। আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে মনিটরিং বাড়াতে হবে, যাতে করে জনগণ সুফল দ্রুত পেতে পারেন। প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করলে একদিকে জনগণ দ্রুত সময়ে সুফল পায় অন্যদিকে সরকারি অর্থের অপচয় কমে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে- প্রকল্পের প্রতিটা টাকা জনগণের। প্রকল্পের সব তথ্য দেশের জনগণের জানার অধিকার আছে। সেই জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক আরও গভীর করবো।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন দেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. ছায়েদুজ্জামান। তিনি কমিশনের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন এবং নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রশিক্ষণে ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ উজ জামান, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মুহিব, পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এস এম রেজাউল মোস্তফা কামাল, যুগ্ম সচিব মো. গোলাম মোছাদ্দেক, ড. সাদিয়া শারমিনসহ ডিজেএফবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এমওএস/একিউএফ/জেআইএম