আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের অনিশ্চয়তার কৌশলে ক্ষতির হিসাব শুরু হতে পারে ২০২৬ সালেই

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈশ্বিক কূটনীতি ২০২৬ সালে কেমন হবে তা আগেভাগেই অনুমান করা যায়: অনিশ্চিত। প্রত্যাশা ভেঙে দেওয়া, কঠোর হুমকি দেখানো, বড় প্রলোভন ঝুলিয়ে রাখা এবং হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার দক্ষতা তাকে বিভিন্ন দেশ থেকে ছাড় আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছে।

মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার হারানোর আশঙ্কায় অনেক দেশ অসম বাণিজ্য শুল্ক মেনে নিয়েছে। ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের পাশাপাশি জাপান ও তাইওয়ানের মতো এশীয় অংশীদাররা প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়েছে মার্কিন নিরাপত্তা ছাতার বাইরে পড়ে যাওয়ার ভয় থেকে। চাপের মুখে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনি আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত আট মাসে আটটি যুদ্ধ থামিয়েছেন, এমনকি ভারত–পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংঘাতও।

আরও পড়ুন>>বাংলাদেশে নির্বাচনসহ ২০২৬ সালে বিশ্ব কাঁপাবে যেসব ঘটনা২০২৬ সালে যে ৭ সংঘাতে নজর থাকবে বিশ্বেরট্রাম্পের অভিবাসী ফেরত অভিযান আরও জোরালো হবে?

নিজের অসংগতিকে তিনি গুণ হিসেবেই তুলে ধরেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘এখন থেকেই আমাদের অনিশ্চিত হতে হবে।’ দুই দফা প্রেসিডেন্সিতেই তিনি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তার কোনো সুস্পষ্ট আদর্শ বা কৌশল আছে—এমন অভিযোগ কেউ তুলবেন না। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মানে ট্রাম্প যেদিন যেভাবে ব্যাখ্যা করেন, সেদিন সেটাই।

অনুমানযোগ্য ট্রাম্প

তবে ট্রাম্পের কিছু প্রবণতা স্পষ্ট। ট্রাম্পের ভাষায়, আমেরিকা এককভাবে শক্তিশালী—‘আমাদের তাদের দরকার নেই, তাদের আমাদের দরকার। সবাইকে আমাদের দরকার।’ বিশ্বব্যবস্থার ভার বহন করা তিনি দেখেন অন্যদের মাধ্যমে আমেরিকাকে ‘ঠকানোর’ কৌশল হিসেবে। বাণিজ্য ঘাটতিকে তিনি ভর্তুকি মনে করেন, যা শুল্ক দিয়ে শোধ করতে হবে। তেল, গ্যাস ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজের দখল নিশ্চিত করতে হবে, গ্রিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে দখলদারির কথাও তিনি উড়িয়ে দেন না। তার বিশ্বাস, স্বল্পমেয়াদি, আকস্মিক শক্তি প্রয়োগ প্রতিপক্ষকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ভেনেজুয়েলার দিকে নজর রাখার পরামর্শও উঠে আসে, যেখানে বড় পদক্ষেপ বড় ব্যর্থতায় রূপ নিতে পারে।

২০২৬ সালে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা উপস্থিতি কমতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে। অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের গ্রহণ করলে ট্রাম্পের সদিচ্ছা পাওয়া যায়; তার ঘনিষ্ঠদের বিরক্ত করলে শত্রুতা অনিবার্য।

রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের সহানুভূতিও নতুন নয়। একই সঙ্গে তিনি বুঝতে শুরু করেছেন, চীনের বাজার ও বিরল খনিজ সরবরাহের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা বাস্তব।

ক্ষতির হিসাব শুরু হতে পারে ২০২৬ সালেই

২০২৫ সালে যদি ট্রাম্পের অনিশ্চয়তার লাভ চোখে পড়ে, তবে ২০২৬ সালেই তার ক্ষতির দিকগুলো স্পষ্ট হতে পারে।

ইউক্রেন যুদ্ধ প্রথম দিনেই শেষ করার ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি তার প্রথম বছরেও বাস্তবায়িত নাও হতে পারে। রাশিয়ার নেতা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বড় কোনো সংকট দেখা না দেওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প হয়তো বুঝবেন না—মিত্রদের প্রয়োজন আসলে কতটা।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অপমানিত হওয়ার পরও কি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা পাশে দাঁড়াবে? অনেকের হাতেই বিকল্প কম। ইউরোপ রাশিয়াকে ভয় পায়, এশিয়া চীনকে। কিন্তু সহযোগিতা হবে আরও অনিচ্ছাকৃত। ব্রাজিল ও ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশগুলোকেও ট্রাম্প কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে ফেলেছেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন তাদের কাছে টানার চেষ্টা করেছে। আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের দরিদ্র দেশগুলো জাতিসংঘে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও মার্কিন সহায়তা কমে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি যখন একই সঙ্গে সবচেয়ে খামখেয়ালি হন, তখন দেশগুলো স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প পথ খোঁজে বা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে চীনের নেতা শি জিনপিং অনেকের কাছে তুলনামূলকভাবে ‘অনুমেয়’ বলেই মনে হচ্ছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/