আন্তর্জাতিক

গাজায় কাজ করা ডজনখানেক সহায়তা সংস্থাকে নিষিদ্ধ করছে ইসরায়েল

গাজায় কাজ করা ডজনখানেক মানবিক সহায়তা সংস্থার কার্যক্রম আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির অভিযোগ, এসব সংস্থা নতুন কঠোর নিবন্ধন ও নিরাপত্তা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন শর্ত অনুযায়ী, গাজায় কর্মরত ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হতো।

ইসরায়েলের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া সংস্থাগুলোর তালিকায় রয়েছে বিশ্বের পরিচিত মানবিক সংগঠন অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা মেদসাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (এমএসএফ)।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ইসরায়েলের ডায়াসপোরা অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা দেয়, যখন গাজায় সাম্প্রতিক তীব্র ঝড়ে হাজার হাজার তাবু ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে আগে থেকেই ভয়াবহ মানবিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এদিকে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড- এই ১০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজার মানবিক পরিস্থিতির ‘নতুন করে অবনতির’ বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তারা পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে উল্লেখ করেন।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শীত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গাজার বেসামরিক মানুষরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও কমছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এখনো ১৩ লাখ মানুষ জরুরি আশ্রয় সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করছে। অর্ধেকের বেশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আংশিকভাবে চালু রয়েছে ও সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্যানিটেশন অবকাঠামোর কারণে ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বিষাক্ত পানিতে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলোকে গাজায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ও ইসরায়েলের আরোপ করা দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য পণ্য আমদানিতে ‘অযৌক্তিক’ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান।

ইসরায়েল এরই মধ্যে শত শত পণ্য গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে। দেশটির দাবি, এসব পণ্য হামাস সুড়ঙ্গ পুনর্নির্মাণ বা সামরিক কাজে ব্যবহার করতে পারে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ও আশ্রয়সামগ্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আরও বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাড়াতে সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দিতে হবে। তাদের ভাষায়, মানবিক সহায়তার জন্য পণ্য পরিবহনের করিডোরগুলো এখনও বন্ধ বা কঠোরভাবে সীমিত রয়েছে। এর মধ্যে রাফাহ ক্রসিংও রয়েছে, যা মিসরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগকারী সবচেয়ে বড় প্রবেশপথ।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, জটিল কাস্টমস প্রক্রিয়া ও ব্যাপক তল্লাশির কারণে পণ্য প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে, অথচ বাণিজ্যিক পণ্য তুলনামূলকভাবে সহজে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়, সপ্তাহে ৪ হাজার ২০০ ট্রাক প্রবেশের লক্ষ্য ঠিক করা, যার মধ্যে প্রতিদিন ২৫০টি জাতিসংঘের ট্রাক অন্তর্ভুক্ত। এটি কোনো সর্বোচ্চ সীমা নয়, বরং ন্যূনতম মান হওয়া উচিত। এই লক্ষ্য বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ সহায়তা নিশ্চিতভাবে প্রবেশ করতে পারে।

অক্টোবরে কার্যকর হওয়া ২০ দফা চুক্তির আওতায়, যা একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করে, ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতা ছিল গাজায় ‘পূর্ণমাত্রার সহায়তা’ অবিলম্বে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া।

এই যুদ্ধবিরতি টানা দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটালেও, স্থায়ী শান্তি চুক্তির অগ্রগতি থমকে রয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস নিরস্ত্রীকরণে সম্মত না হওয়া এবং তাদের হাতে থাকা শেষ জিম্মির মরদেহ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত গাজার যে ৫৩ শতাংশ এলাকা এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে তারা সরে যাবে না। ইসলামপন্থি সশস্ত্র সংগঠন হামাস এখনো পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে সম্মতি দেয়নি।

সোমবার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করছেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দ্রুত ‘পুনর্গঠন’ শুরু হবে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি অভিযানে অঞ্চলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে পুনর্গঠন নিয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এসএএইচ