জাতীয়

এরশাদ উল্লাহর হাতে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, স্ত্রীর ৩ কোটি ২৬ লাখ

 

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নগদ অর্থ ও সম্পদের বড় একটি অংশ তার স্ত্রীর নামে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা অর্থ, অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে তার স্ত্রীর মালিকানাধীন সম্পদের পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রেই তার চেয়ে বেশি।

গত ২৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হলফনামায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

নগদ অর্থ বেশি স্ত্রীর হলফনামা অনুযায়ী, এরশাদ উল্লাহর নিজের নামে নগদ অর্থ রয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৫৪ টাকা। বিপরীতে তার স্ত্রীর নামে নগদ অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার ৩৪২ টাকা।

ব্যাংকে জমা অর্থের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। এরশাদ উল্লাহর নিজের নামে পাঁচ ব্যাংকে জমা রয়েছে ৫৯ লাখ ৭২ হাজার ১৩০ টাকা। আর স্ত্রীর নামে তিন ব্যাংকে জমার পরিমাণ এক কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯২ টাকা।

আয়ের প্রধান উৎস বাড়ি ভাড়াএরশাদ উল্লাহর বার্ষিক আয়ের প্রধান উৎস বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক স্থানের ভাড়া। ভাড়া থেকে তার বার্ষিক আয় ২১ লাখ ২৩ হাজার ২৮০ টাকা। এছাড়া কৃষিখাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৫০ টাকা। শেয়ার, বন্ড ও সঞ্চয়পত্র থেকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৬ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯২ টাকা আয় দেখানো হয়েছে।

অস্থাবর সম্পদ: কোটি টাকার বিনিয়োগঅস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের তথ্য উঠে এসেছে। নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র ও কোম্পানির শেয়ার বাবদ এরশাদ উল্লাহর সম্পদের মূল্য ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৮৫১ টাকা। স্ত্রীর নামে একই খাতে রয়েছে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬৪ টাকা। বিমা ও ট্রাস্টে নিজের নামে জমা রয়েছে ২৯ লাখ ৪ হাজার ১১৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৭ টাকা।

যানবাহনের হিসাবেও উল্লেখযোগ্য সম্পদ রয়েছে। এরশাদ উল্লাহর নিজের নামে দুটি জিপ রয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি জিপ, যার মূল্য ৫০ লাখ টাকা।

আরও পড়ুনশাহজাহান চৌধুরীর হাতে নগদ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, হলফনামায় ৭১ মামলাছয় বছরে আবু সুফিয়ানের আয়-সম্পত্তি বেড়েছে আড়াইগুণ

সোনা ও মূল্যবান ধাতুর ক্ষেত্রে নিজের নামে রয়েছে ৩০ ভরি এবং স্ত্রীর নামে ৫০ ভরি সোনা। ইলেকট্রনিক পণ্যের মূল্য নিজের নামে ১০ লাখ টাকা ও স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা। আসবাবপত্র বাবদ নিজের নামে রয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে নিজের নামে অস্থাবর সম্পদের বর্তমান আনুমানিক মূল্য ১২ কোটি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৫ টাকা। স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৬ কোটি ৬১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১১ টাকা।

স্থাবর সম্পদ: জমি ও ভবনে বড় বিনিয়োগস্থাবর সম্পদের হিসাবেও বড় অঙ্কের সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে। এরশাদ উল্লাহর নিজের নামে রয়েছে ৪০ শতাংশ কৃষিজমি। এছাড়া তার নামে ১৮০ শতাংশ অকৃষিজ জমি রয়েছে, যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ শতাংশ অকৃষিজ জমি, যার বাজারমূল্য ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা।

ভবন ও আবাসনের ক্ষেত্রে নিজের নামে তিনটি ভবনের বাজারমূল্য ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৩১৩ টাকা। স্ত্রীর নামে থাকা দুটি ভবনের বাজারমূল্য ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের নামে থাকা দুটি বাড়ি ও একটি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা। স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি ও দুটি অ্যাপার্টমেন্টের বাজারমূল্য ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে নিজের নামে স্থাবর সম্পদের বর্তমান মূল্য দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৩১৩ টাকা। স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ঋণ-দায়হলফনামায় ঋণের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ উল্লাহর নিজের নামে গাড়ি ও ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৮০ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৩ টাকা। তার সন্তানের নামে দুটি ব্যবসায়িক ঋণ রয়েছে এক কোটি ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এছাড়া কার (গাড়ি) ঋণ রয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৩ টাকা।

কর পরিশোধের তথ্য২০২৫-২৬ করবছরে এরশাদ উল্লাহ নিজের নামে আয়কর দিয়েছেন ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪২৭ টাকা। তার স্ত্রীর নামে আয়কর দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং সন্তানের নামে ৭০ হাজার ৬৭২ টাকা।

নির্বাচনি হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এরশাদ উল্লাহ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস।

এমআরএএইচ/কেএসআর/জেআইএম