ক’দিন আগে বাড়ি থেকে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার আগে রোকসানার (২৩) স্বামী খলিল হাওলাদার (৩০) বলেছিলেন, সাগর থেকে ফিরেই পাঁচমাস বয়সী একমাত্র ছেলেকে ভালো ডাক্তার দেখাবেন। করবেন বাজার-সদায়ও। কিন্তু ১৭ আগস্ট ভোরে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভারে সৃষ্ট ঝড়ের পর থেকেই নিখোঁজ তিনি। আর শনিবার বিকেলে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ছেলে বায়োজিদও। এ যেন গৃহবধূ রোকসানার ‘মরার উপর খড়ার ঘা’।পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার হুইসান পাড়ার দরিদ্র জেলের বউ রোখসানা। মা-বাবা নেই, নেই শ্বশুর-শাশুড়িও। একমাত্র বোন সেও থাকে চট্টগ্রামে। ঘরে খাবার না থাকার কারণে ছোট ছোট দুই শিশু সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে থেকে দিশেহারা রোখসানা। পাঁচ মাস বয়সের শিশু সন্তান বায়োজিদের শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়লে ঘর ছেড়ে বের হন রোকসানা। চার বছরের কন্যা শিশু সুমাইয়া আর পাঁচ মাসের বায়েজিদকে নিয়ে শনিবার বিকেলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যান রোখসানা। অজানা, অচেনা ব্যস্ত হাসপাতালের কাউকেই চেনেন না রোখসানা। এদিকে দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়ছে বায়োজিদ। দিশেহারা রোখসানার পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই নিথর হয়ে পড়ে বায়েজিদ।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অপুষ্টির কারণে একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল বায়োজিদ। শিশু বায়োজিদ মারা যাওয়ার পর থেকেইে কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন রোখসানা। অচেনা শহর। অচেনা হাসপাতাল। একদিকে শিশুপুত্র বায়েজিদের লাশ আরেকদিকে চার বছরের অবুঝ শিশু সুমাইয়া। স্বামী নেই, বাড়ি ঘরেও নেই কেউ।এখন কোথায় যাবেন রোখসানা? শনিবার সন্ধ্যার পর একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রোকসানাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বরগুনা জেনারেল হাসাপাতালে উপস্থিত স্থানীয়রা। অ্যাম্বুলেন্সে যেতে যেতে খানিক পর পর জ্ঞান হারিয়ে মুর্ছা যাচ্ছিলেন রোখসানা।এসএস/পিআর