দেশজুড়ে

যমুনার চরে বর্ণিল ঘুড়ি উৎসব

চারপাশে নদী। মাঝখানে ছোট্ট বালু চর। দেখে মনে হবে নাম না জানা বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ। যাতায়াতের জন্য নৌকাই একমাত্র মাধ্যম। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়লেই চরটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়।

এমনই এক পরিবেশে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে যমুনা চরে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো বর্ণিল ঘুড়ি উৎসব। স্থানীয় যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত শত দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উৎসবের আয়োজন করে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর এ ঘুড়ি মেলার আয়োজন করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরিচা লঞ্চঘাট থেকে শত শত মানুষ নৌকাযোগে চরে যাচ্ছেন। আকাশে তখন উড়ছে শত শত ঘুড়ি। পতেঙ্গা, কইরা, দোল, সাপা, হেলিকপ্টার, মানুষ, চিলসহ নানা নামের অর্ধশতাধিক ঘুড়ি নিয়ে জেলার নানা প্রান্ত থেকে ঘুড়িওয়ালরা হাজির হয়েছেন। নাটাই হাতে তারা মেতে উঠেছেন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায়।

কাদের মিয়া নামে এক প্রতিযোগী জানান, তিনি প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ করে একটি হেলিকপ্টার ঘুড়ি বানিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে এটা উড়াতে পেরে ভীষণ খুশি তিনি।

মেলায় এসেছে বিরাট আকারের এক সাপ ঘুড়িও। যার লেজ তিনশ হাত। ঘুড়িটির মালিক জানান, ছোট বেলায় ঘুড়ি ওড়াতেন। কিন্তু এখন সেই সময় এবং সুযোগ কোনোটাই নাই। তাই বছরের এই দিনটা মিস করেন না।

শুধু ঘুড়িয়ালরাই নয়, অনেক দর্শনার্থীকে শখ করে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা গেছে। ছোট-বড় সকলেই জমজমাট এ আয়োজন উপভোগ করেছেন।

আলী হোসেন নামে এক দর্শনার্থী জানান, নদীর মাঝ খানে এই উৎসবের আয়োজন করায় পরিবেশটা খুব ভাল লাগছে। তাছাড়া একসঙ্গে এতগুলো ঘুড়ি দেখে তিনি আনন্দিত।

রুমা, কলি, মাসুমসহ বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, বছরের এই দিনটির জন্য তারা অপেক্ষায় থাকেন। আগামীতেও যেন মেলা অব্যাহত থাকে সেই দাবি জানান তারা।

ঘুড়ি উৎসবের প্রধান অতিথি মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয় জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই শতদল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবছর এই উৎসবের আয়োজন করে।এ ধরনের আয়োজনে সবাইকে পৃষ্টপোষকতা করার আহ্বান জানান তিনি।

সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সূর্য্যের লাল আভা যখন নদীতে চিকচিক করছিল তখন অন্যরকম এক ভালালাগা উপভোগ করছিলেন দর্শনার্থীরা। তাইতো দিন শেষে অন্ধকার নেমে আসলেও, শেষ হচ্ছিল না ঘুড়ি উৎসবে আসা মানুষের মিলন মেলা।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমএস