সাহিত্য

আলীম হায়দারের চারটি কবিতা

বিবর্ণ ফেনা

সাগরেরও লাভা থাকে ভ্যাপসা বাতাস বেরোয়ঝাপসা কুয়াশাবাষ্পকণাফুটন্ত ভাতের পাতিল, বলক আভা।

সমুদ্রের ফুলে ওঠা রূপ—নাটকীয় নৃত্যকলা, উথলে ওঠা কামনা, উদাসীপনা,অবসাদ,উচ্ছ্বাসের বাহানা,উগড়ে দেয়া ঘৃণা,মানুষের বর্জ্যে ক্ষেপে ওঠা জলকণা।

জোয়ারে ভিন্ন দ্যোতনা: জলবহরের দোলা, ও, আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ফেনা এক না

এমনকী বাতাসের উর্মিখেলাও সময়ে আলাদা। 

কিছু ঢেউ ভালোবাসা দেয়কিছু কিছু উগড়ায় ঘৃণা। ঝাউবন সৈকত আজ বড় একাশীতলনিরবহু-হু করা কান্না।

রামুর শিশুরা এখননিশিনাদ শোনে না অথচ একসময় জলশঙ্খ শুনতে শুনতে ঘুমোতে যেতো তারা!

সাগরও স্বভাব বদলায় দুপেয়ে দানবের—দালানযাতনায়।

সমুদ্রের এখন ফেরারী জীবন একটু ভালোবাসা চায়। কে দেবে? কার আছে দরিয়ার অধিক দিল, গভীর হৃদয়!

**

প্রোফেটিক

একদা শীতার্ত রাতে জীর্ণবস্ত্রের এক কদর্য তরুণকে রাস্তা থেকেতুলে এনে রাজদণ্ড ধরিয়ে দিলাম, শিরস্ত্রাণ পরার আগেই— সেআমার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলো। অট্টহাসিতে ফেটে পড়া ছাড়াআমার সামনে আর কোন উপায় থাকলো না, আমি সশরীরেমৃত্যুর পথে হাঁটতে থাকি অবিরত—

এক প্রেমিকা ছিলো, যে আমাকে ফাগুনের মধুচন্দ্রিমায়— ডুবেযাওয়ার স্বপ্নে বিভোর করে তুলতো, হুট করেই সে একদিন একটিহলুদ কার্ড ধরিয়ে দিলো। জীবনটা ফুটবল আর মাঠের মতোই আপেক্ষিক; মাঠের সাথে একটা ফুটবলের যে সম্পর্ক, মানুষেরসাথে মানুষের সম্পর্ক তার চেয়ে ক্ষীণ।

এক বন্ধু ছিলো, প্রকাণ্ড অন্ধকারে যে কি না রক্তের সাগড়ে হাবুডুবুখাচ্ছিলো। মৃত্যুদূতের হাত থেকে ছিনিয়ে নিলাম আমি তাকে। সম্বিৎফিরে পেয়ে সে আমাকে আততায়ী ডাকলো! আমি অভিসম্পাতপেলাম যমদূতের কাছ থেকে, আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলো—

এক আহত পথিক— যার শরীর বেয়ে চুয়েচুয়ে পূঁজ পড়ছিলো,ক্ষুধার্ত চোখে সে আমার কাছে অন্ন চাইলো। দু’বেলার অনাহারীআমি, অতিথির দিকে নিজের পাত ঠেলে দিলাম। সে আমাকেতার নোংরা পূঁজমাখাবস্ত্র ছুড়লো। প্রচণ্ড হতভম্ব আমি— আমারশরীর গুলিয়ে বমি এলো। একদল জীবস্মৃতের মাঝে জীবন ছুড়েদিয়ে আমি মৃত্যুর পথে হাঁটতে থাকি অবিরত—

মৃত্যু আমাকে নিতে এলো না। দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিনে,আমি মৃত্যুর পিছে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। পৃথিবীর শেষপ্রান্তে এসে যখনবিষণ্ন হয়ে আসে চোখ দু’টো, তখনই কে যেন জড়িয়ে ধরলো। আমি মুক্ত হতে চেয়েও পারি না। বাঁচার আকুতি জাগে— শিকারীতীরের মুখে থাকা এক মায়া হরিণীর মতো। কিন্তু —

আমি নিয়তির পথে হেঁটে যাই মহান দাউদের মতো, চতুর্থ আসমানথেকে নেমে আসে যীশু, আমার জন্য।।

**

ব্যর্থ অক্ষরের গান

ডাবল এমএ পাস ছোকরাদের মুখের দিকে তাকানো যায় নামায়া লাগে, রাণীক্ষেতে আক্রান্ত মুরগী একেকটা—অফিসের পিয়নের মতো চলাফেরাহাতভর্তি সিভি’র খাম, আজকাল ই-মেইলের যুগ—ইনবক্স-সেন্ডবক্সজুড়ে প্রেমের চিঠি হয়ে ওড়াউড়ি করে চাকরি ভিক্ষার বায়োডাটা। যে বয়সে উতাল প্রেমের রাত কাটানোর কথা, সে সময়জুড়ে তুমুল ডিপ্রেশন, যৌবনের বিক্ষোভস্মৃতিগুলো দরদামহীন বেঁচে দিতে একটুও দ্বিধা করে না ওরা—চাকরি খুব দরকার একটা, এমনকী ভূমি বা বাজারদস্যুদের দাস হলেও!দাসপ্রথা ফিরেছে আবার— আগে দাস হতো অশিক্ষিত মুর্খরা, এখন হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অশিক্ষিতরা।সার্টিফিকেট একটি সস্তা পণ্য, দাসের দাম ক্রমহ্রাসমান!

**

প্রেমিকের চিঠি

আমার মাধবীলতাভেবেছিলাম কোন রৌদ্রতপ্ত দুপুরেএকসাথেবসেবসেঅসম প্রেমের স্বপ্ন বুনবোরমনার শীতল ছায়ায়কিংবাজাহাঙ্গীরনগরের স্বর্গ সবুজ বুকে

তোমার কোমল হাত ছুঁয়ে ছুঁয়েস্বপ্নের জাল বুনেহারিয়ে যাব নিরালায়

ক্ষণিক পরেতোমার লালচে গালেআলতো করে টোকা দিয়েনাকের ডগার লক্ষ্মী ঘাম ছুঁয়ে বলবো-‘কি, লজ্জা পাচ্ছো?’

তোমার ভারি নিঃশ্বাসেউদভ্রান্ত গাংচিল হয়ে যাবো আমি।

মাধবী-স্বপ্নগুলো আমায় কাঁদায়, তুমি কাঁদ কি?

এসইউ/আরআইপি