ধর্ম

হজ পালন শেষে আল্লাহর মেহমানদের করণীয়

হজের পর গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনই হলো হজ কবুল হওয়ার লক্ষণ। হজের পর হজ পালনকারীদের উচিত আল্লাহর বিধি-বিধান পালনের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা।

আর হজ পরবর্তী সময়ে হজ পালনকারীরা সব সময় ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। পাপের কাজ থেকে দূরে থাকে। আর এমনটি করার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

হজের পর আল্লাহর মেহমানদের করণীয়হজ পালনে শুধুমাত্র পবিত্র নগরী মক্কায় আসা এবং সেখানের আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদনের মধ্যেই হজের উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায় না বরং হজ পরবর্তী সময়েও রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ জীবন-যাপন ও আমলি জিন্দেগি।

আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পথে একনিষ্ঠভাবে জীবন পরিচালনার জন্য অন্যতম সহায়ক হলো হজ। তাই হজ পরবর্তী জীবন হবে প্রত্যেক হজ পালনকারীর জন্য তাওহিদের আকিদায় ও রেসালাতের ভালবাসার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর।

হজ পরবর্তী এমন কোনো কাজই করা যাবে যেখানে তাঁর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ন্যূনতম সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ বলেন-

‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে শিরককারীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গেও নেই।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩)

আর এ কারণেই হজ পালনকারীদের জন্য হজ পরবর্তী সময়ে সমাজে ভালো কাজের অংশগ্রহণ বাড়ানো, অন্যায় প্রতিহত করে প্রিয়নবির পন্থায় অবিরাম চেষ্টা সাধনা চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক। নিজে যেমন অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবে তেমনি অন্যকেও অন্যায় থেকে হেফাজত করতে সচেষ্ট থাকা জরুরি।

হজের পর বিশেষ আমলএকজন মুসলমানের হজ সম্পাদনের পর ওই ব্যক্তির করণীয় সম্পর্কে কুরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যা যথাযথ পালন করা প্রত্যেক হজ পালনকারীর জন্য একান্ত কর্তব্য। হজ পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আর অতঃপর যখন হজ্জ্বের যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি সমাপ্ত করে সারবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে; বরং তার চেয়েও বেশী স্মরণ করবে। তারপর অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০০)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ সম্পাদনকারীদের জন্য কিছু দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, হজ পালনকারীর জন্য পবিত্র ভূমি থেকে দেশে ফিরেই বাড়ির নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। হাদিসে এসেছে-

হজরত কাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি)

অতঃপর নিজ ঘরে প্রবেশ করে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে-

‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাআত নামাজ পড়বে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে।

আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনও দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)

হজ পালনকারীদের শুকরিয়া আদায়নিরাপদে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজের যাবতীয় কাজ সম্পাদনকারীদের জন্য শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। শুকরিয়াস্বরূপ তাঁরা নিজেদের প্রতিবেশী গরিব-মিসকিন এবং আত্মীয়স্বজনকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবে। এ আপ্যায়নের আয়োজন করা বৈধ। তবে দাওয়াত ও খাবারের ব্যাপারে রিয়া ও অহংকার মুক্ত থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন।’ (বুখারি)

হজ পরবর্তী সময়ে হাজি সাহেবদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, সৌজন্য সাক্ষাৎ, মুসাফাহ, কোলাকুলি করা এবং তাঁদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব।

হজের সময় হজ পালনকারীদের জন্য জমজমের পানি নিয়ে আসা বৈধ। হজ পালনকারীগণ পবিত্র কাবা শরিফ থেকে নিয়ে আসা জমজমের পানি লোকদের পান করানো মুস্তাহাব। এবং তা অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।’ (তিরমিজি)

বিশেষ সতর্কতামনে রাখতে হবে ব্যাপক আয়োজন করে হজ পালনকারীদের জন্য সাজ-সজ্জা তথা ফুলের মালা বিনিময়; তাদের সম্মানে স্লোগান ইত্যাদি ঠিক নয়। এ সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যতিত আন্তরিকতার সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে হাদিয়া-তোহফা দেয়া সুন্নাত। কিন্তু মনের আগ্রহ ছাড়া লোক দেখানো হাদিয়া বা উপহার প্রদান বৈধ নয়। যা অনেকে চক্ষু লজ্জার জন্য করে থাকেন।

আবার নামাজ পড়ে বিধায় নামাজি; আর হজ পালন করেছেন বিধায় হাজি ইত্যাদি প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকাও জরুরি।

পরিশেষে...অনেক শারীরক পরিশ্রম এবং আর্থিক কুরবানির ইবাদত হলো হজ। যারা আল্লাহর নির্দেশ পালনে কষ্ট ও অর্থ ব্যয় করে হজ সম্পাদন করেছেন। তাদের জন্য জীবনের বাকী দিনগুলো পরিপূর্ণ ইসলামের ওপর থেকে সঠিক পথে জীবনযাপন করা একান্ত জরুরি।

কারণ হজের সময় তাদের মাঝে হজের ইহরাম ও ইহরামের কাপড় পরিধানের মাধ্যমে পরকালীন জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য ছিল সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনকারীকে লোক দেখানো ইবাদত-বন্দেগি থেকে হেফাজত করুন। হজ পরবর্তী জীবন-জিন্দেগি ও ইবাদাত-বন্দেগি আল্লাহর পথওমতের ওপর জীবন পরিচলনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর