শিক্ষক সংকটে সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জেলার ৯টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে ৫৯০টি ও সহকারী শিক্ষকের ৪৬১টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষক সংকট শাহজাদপুর উপজেলায়। এতে শিক্ষা বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘদিন থেকে এই অবস্থা চলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে করে বিঘ্নিত হচ্ছে দাপ্তরিক কাজ ও শিক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ৬৬৮টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ্য বিদ্যালয়েই শিক্ষক সংকট রয়েছে। এর মধ্যে ৫৯০টি বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে ও ৪৬১ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি ৩৫ ভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসএসি)। আর ৬৫ ভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে পদোন্নতির কার্যক্রমে জটিলতা ও অবসরজনিত কারণে পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ৭২টি ও সহকারী শিক্ষক ২২টি, কামারখন্দ উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২২টি ও সহকারী শিক্ষকের ২৯টি, কাজিপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৯৪টি ও সহকারী শিক্ষকের ৮৭টি, রায়গঞ্জ উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ৭১টি ও সহকারী শিক্ষক ১৭টি, তাড়াশ উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৪৭টি ও সহকারী শিক্ষকের ২২টি, উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৭৮টি ও সহকারী শিক্ষকের ৫১টি, শাহজাদপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৯৫টি ও সহকারী শিক্ষকের ৮৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে মামলা চলছে।
বেলকুচি উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৬৫টি ও সহকারী শিক্ষকের ৫৭টি, চৌহালী উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৪৬টি ও সহকারী শিক্ষকের ৮৭টি পদ শূন্য রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদগুলো শূন্য থাকার কারণে বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা বিপাকে পড়েছেন। তাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বেশি সংখ্যক ক্লাস নেয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোতে।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হওয়ার কারণে আমরা প্রায় দেখি ছাত্র-ছাত্রীরা হৈ-হুল্লোড় করে। তখন পাশের কক্ষ থেকে শিক্ষক এসে তাদেরকে পড়া মুখস্ত করতে দিয়ে আবার সেই কক্ষে চলে যান। শিক্ষক সংকটের কারণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার ফলে শিক্ষকরা শ্রেণি কক্ষে ঠিকমতো পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার এক সহকারী শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। শিক্ষকরা নিজের ইচ্ছামতো চলেন। এছাড়া একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি দাপ্তরিক কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে পারেন না।
তাড়াশ উপজেলার গুড়পিপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ পরিচালনায় করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রধান শিক্ষকের থাকলে শিক্ষার গুনগুত মানও বৃদ্ধি হয়। তাই জরুরী ভিত্তিত্তে শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণ করা দরকার।
তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণ করলে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, ফজলুল হক বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ২২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেগুলো তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার কারণে পাঠদানে নানা সমস্যা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা জানান, জেলার ৯টি উপজেলা প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণে এরই মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের এসব শূন্য পদ পূরণে সর্বশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারদের কোটার মাধ্যমে ১০ জনকে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু শিক্ষকের পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ে শূন্যপদ দেখিয়ে কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। আর সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে মন্ত্রণালয় থেকে অনেক পূর্বেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/জেআইএম