সাহিত্য

কাশ্মীরী শাল

রাজস্থানি তলোয়ার ও ঢাল,মসৃণ-কোমল কাশ্মীরী শাল,আর বাবুগিরী চাল;এই তিনে খায়েশ ছিলআমার বহুকাল।

তিন যুগের অধিক কাল আগে১৯৮১ সাল,কিশোর বেলায় বায়না ধরিলাম,বাবার কাছে বলিলাম,‘আমার চাই রাজস্থানি তলোয়ার ও ঢাল’।বাবা কৃত্রিম রেগে ও হেসে এক গালবললেন, ‘এ কেমন বায়না!ওগুলো রাজা মহারাজাদের কাজ,আমরা তো নই কো রাজানই কো জালিম অস্ত্রবাজ।’বোঝালেন বাবা আমি বুঝিলাম,ধরিনি বায়না তলোয়ার আর ঢালেআর কোন কালে।

বাবুগিরী চাল আজও রয়ে গেছেঠিক আগেরই মত;এ নিয়ে বাবা-মাশুনিয়েছেন নানান কথাবকেছেন কত-শত।তাঁহারা হয়েছেন স্বর্গগতআমি আজও তথৈবচ।

তারপরে ১৯৮৩ সালের দিকেইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান চাচাগায়ে চাপিলেন কাশ্মীরী শাল,হাজার হাজার পোস্টার ছাপিলেনঘরে-বাইরে পোস্টার সাটিলেন।

আমি তা দেখে মনে মনে ভাবিআমারও চাই একটি কাশ্মীরী শাল,মাকে পটাতে দিলাম একটি চাল,এটা করে দেব ওটা করে দেব মাকে মামা বাড়ি নিয়ে যাবউদ্দেশ্য ভালো,যদি মেলে একটিবহুল কাঙ্ক্ষিত কাশ্মীরী শাল।

অবশেষে মাকে পাড়িলামআমার মনের কথা,‘মা, একটি কাশ্মীরী শাল,আমাকে কিনে দিতে হবে।নেতা হবপাঞ্জাবির উপর ভাঁজ করা শাল চাপাবো,ডানে বায়ে চোখ নাচাবো।’মা দিলেন এক ধমক,‘পরীক্ষার পড়া পড়নেতাগীরি করিওযখন হবে অনেক বড়!’মুখ করিলাম ভার,কাশ্মীরী শালআর গায়ে চাপা হলো না আমার।

তারপর নয়টি বছর পরেসস্ত্রীক চলিলাম ইস্টার্ন প্লাজায়কাশ্মীরী শাল কিনিবার তরেআবার বাঁধা, স্ত্রী সুধায়,‘কথা শোন, শাল কেন কিনিবে?ওটা কি তোমার মত যুবকদের মানায়?চল কিনে দেই স্যুট-টাই।’তারপর আর কোনদিনকাশ্মীরী শাল কেনার কথাআর মুখে আনি নাই।কত কিছু কিনেছি তারইয়ত্তা নাই।

তারপর আরও ছাব্বিশটি বছর পারকাশ্মীরী শালের কথা ভুলেই গিয়েছি।এই তো ক’দিন আগেবিদেশ ঘুরে ছোট মামণি বাড়ি এসেআমার দু’চোখ থেকেহাত সরিয়ে বলে,‘বাবা, এবার চোখ খোল!তোমার জন্য কী এনেছি দেখ,ভারতের দার্জিলিং থেকে কেনা,পছন্দ হয়েছে কি-না বল?’আমি তো হতবাক!এ তো কাশ্মীরী শাল!যা আমার ভাগ্যেজোটেনি কোন কালে,অতি আনন্দে দু’ফোটা অশ্রুগড়িয়ে নামল গালে!

কত স্মৃতি কত ব্যথাকত গাথা পড়িল মনে।এই কাশ্মীরী শালে!হায় রে কাশ্মীরী শালতোমায় পেতে আমার কেটে গেলজীবনের অর্ধশত সাল।

এসইউ/এমএস