দেশজুড়ে

মায়ের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে লাশ

বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের উত্তর বড় লবণগোলা গ্রামের শরীফ বাড়ি। বনেদি পরিবারের এই বাড়িতে লোকজনের আসা-যাওয়া সবসময়। তবে বুধবার রাত ১০টার দিকে অন্যসব সময়ের তুলনায় বাড়িতে লোকসমাগম ছিল অনেক বেশি। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই কান্নার শব্দ আসে চারদিক থেকে। কেউ কাঁদে প্রকাশ্যে আবার কেউ নীরবে।

এই বাড়ির একমাত্র ছেলে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে (২৫) বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।

আরও পড়ুন- স্ত্রীকে ‘উত্ত্যক্তের’ প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

পরে বিকেল ৩টার দিকে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। রিফাতের ওপর হামলার সময় তাকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তবুও স্বামীকে শেষরক্ষা করতে পারেননি তিনি।

নিহত রিফাতের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ডেইজি বেগম। প্রথমে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে জ্ঞান হারান তিনি। বুকে পাথরচাপা দিয়ে অশ্রু লুকাচ্ছেন বাবা দুলাল শরীফ। রিফাতের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে দলে দলে লোক আসছে বাড়িতে। ক্ষণে ক্ষণে সেসব লোকের আড়ালে গিয়ে কাঁদছেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।

আরও পড়ুন- স্ত্রী জাপটে ধরছেন খুনিদের, দাঁড়িয়ে দেখছেন সবাই

রিফাতের বাবা মো. দুলাল শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, সকালে খাবার খেয়ে রিফাত তার মা ডেইজি বেগমের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। বাজারে গিয়ে দেখা হয় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে। এরপর স্ত্রী মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজে যায় রিফাত। কিন্তু কলেজে প্রবেশ করার আগেই রিফাতের ওপর হামলা করে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ আরও কয়েকজন। সেখানেই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

তিনি বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

আরও পড়ুন- সন্ত্রাসীর সঙ্গে যুদ্ধ করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না স্ত্রী

নিহত রিফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন জাগো নিউজকে বলেন, নিহত রিফাতের মরদেহ বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সকালে রিফাতের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে। এরপর মরদেহ নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা দেব আমরা।

এ বিষয়ে বরগুনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানে থানা পুলিশের সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযান চলছে, শিগগিরই খুনিদের গ্রেফতার করবে পুলিশ। রাতেও আমরা কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছি।

মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এএম/পিআর