নিভৃতচারী ও ভিসুভিয়াস
হাজার মানুষের পায়ের শব্দে যখন পথগুলো কম্পিত হয়, মানুষের হাসি-কান্নার শব্দেলোকালয় মুখরিত হয়;ঠিক তখনো তুমি থাকো একা নিশ্চুপ!স্তব্ধতার দেহে তোমার আজন্ম বসবাস।নীরবতার সুবাসে তোমার বিলীন খণ্ডাংশ খুঁজে খুঁজে বৃথাই এক করার চেষ্টায় কেউ ক্লান্ত হয়তো!
নীলাভ আকাশের উঠোনে শুভ্র মেঘ যখন খেলা করেকেউ একজন উপমা খোঁজে মেঘের ভাঁজে,ঠিক তখনো তোমার শুভ্র আঁচল ছেয়ে দেয় আকাশ!
সবুজ থেকে গাঢ় সবুজের অরণ্য কিংবা পাহাড়েযেখানে মিশেছে সব প্রণয়ের রংযেখানে ঢল নামে স্বচ্ছ প্রপাতেঠিক সেখানেও তুমি থাকো সবুজ শৈবালের মত!
অনেকটা পথ বেয়ে আসা নদী কিংবা ঝরনার স্রোতঅনেকটা ঝড়ো বাতাসে ভিজে যাওয়া পাখির শরীরকুয়াশায় ভেজা দুর্বা ঘাস কিংবা বুনো লতাটাওগা এলিয়ে দেয় সূর্যের উত্তাপে,ঠিক তখনো নিরুত্তাপ তুমি, নির্বিকার তুমি, শীতল তুমি!
একটা বিস্ময় চিহ্ন হয়ে সামনে দাঁড়ায় তোমার অবয়বএকটা আবিষ্কারের নেশাও চেপে বসে,অথচ ধুসর থেকে ধুসরে তুমি মিলিয়ে যাওঅমীমাংসিত এক রহস্যের দরজা খুলে রেখে। ভেতরে সুপ্ত ভিসুভিয়াস লালন করো আজীবন!
****
নিশ্চুপ স্রোত
আকাশের বিস্তৃত উঠোন;অজস্র তারার ভিড়েও চাঁদের একাকিত্ব কাটে নাসহস্র-কোটি বছর ছায়াপথ হেঁটেনক্ষত্ররাও মরে যায় একা।সূর্যের প্রতিবেশী বলে একাই ভস্ম হয়অতন্দ্র সর্বসংহা অবিচল বুধ,অথচ নিরুত্তাপ এ গ্রহের বুকেআজন্ম উত্তাপ ছড়াই নির্বোধ!
নিশ্চুপ স্রোতের কলতান ভাঙে না মগ্নতা।নীরব আততায়ী সময়ের ছলনায়আমাদের উৎসব,সূক্ষ্ম ভ্রান্তিতে ডুবে থাকে এক মোহময় জীবনমহাকালের সমুদ্রে একা ভেসে চলাতবু একা না থাকার সুনিপুণ অভিনয়!!
****
সিংহ স্বপ্নের বৃত্তান্ত
ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে আছি মাছের আশায়উদ্যম ভরা একটা সকাল,সকাল গড়িয়ে দুপুরদুপুর গড়িয়ে বিকেল।মাছের দেখা তবু মেলে নানিরালায় নিরাশায় অপেক্ষা বাড়ে।
বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যে হয়ে আসছেআমিও ছিপ ছাড়ি নাঅথচ একটু পরই একটা ভরা সন্ধ্যা গ্রাস করবে আমায়।এখন যে অন্ধকারের সুর বাজছেসন্ধ্যা গড়িয়ে গাঢ় অন্ধকার ধেয়ে আসছে!এখন শুধুই বেলা শেষের স্রোতভরা সন্ধ্যার হাহাকার ধ্বনির ঘণ্টা বাজছেসান্ধ্যস্তুতির ঘণ্টায় মুখর সব মন্দির।
হয়তো শেষবেলার ছিপে ধরা দেবেহয়তো ধরা দেবেই শেষ পর্যন্ত!আর্নেস্ট হেমিংওয়ের গল্পের বুড়োর মতআমিও মাছের কঙ্কাল নিয়ে ফিরবো।
অথচ আমার ও সিংহের স্বপ্ন শেষ হয় নাফেরা হয় না, আমার ফেরা হয় না তবুও!
এসইউ/জিকেএস