রমজানের শেষ দশকে ক্ষমা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। আর ২৫ তারাবিতে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দিকনির্দেশনাই পাবেন রোজাদার। হাফেজে কোরআনগণ সে আশ্বাস ও দোয়াই পড়বেন আজ। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারা মুমিনর জন্য অনেক বড় নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা সুরা তাহরিমে অপরাধমুক্ত জীবন গঠন এবং আল্লাহর নির্দেশ মেনে জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
'হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।' (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)
ক্ষমার দশকের বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়ার দোয়া
রমজানের শেষ দশকে মুমিন বান্দা বেশি বেশি কোরআনুল কারিমের এ আয়াত তেলাওয়াত করবে। বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করবে। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনা করে দরদমাখা কণ্ঠে বলবে-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।' (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)
অর্থ : 'হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।'
২৫ তারাবি পড়ার রাত মর্যাদার একটি রাত। এ রাতেও হতে পারে হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত 'লাইলাতুল কদর'। এ রাতে রোজাদার বান্দা ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেদের হৃদয় আলোকিত করবে। গুনাহ থেকে নাজাত পাবে। গুনাহমুক্ত জীবন পেতে রোজাদাররা আজ রাতও ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকবে।
২৫ তারাবিতে ২৮ পারার ৯টি সুরার তেলাওয়াত শেষ হবে। আজ সুরা মুজাদালাহ, সুরা হাশর, সুরা মুমতাহিনা, সুরা সফ, সুরা জুমআ, সুরা মুনাফিকুন, সুরা তাগাবুন, সুরা ত্বালাক্ব ও সুরা তাহরিম। সুরাগুরোর সংক্ষিপ্ত আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ০১-২২
মদিনায় নাজিল হওয়া সুরা মুজাদালায় আল্লাহ তাআলা তাঁর হেদায়েতের বর্ণনা দিয়েছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেদায়েতের মাধ্যমে মানব জীবনে জটিল ও কঠিন সমস্যার সমাধান করেছেন। তাছাড়া শরিয়তের বিধান প্রবর্তনের পাশাপাশি মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করার উপায়ও ওঠে এসেছে এ সুরায়।
সুরাটির শুরুতেই মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের বিধান ও কাফফার ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলো- 'স্ত্রীকে মা বলা'। এটি মারাত্মক অপরাধ। এ অপরাধের বিধান-কাফফারার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।। এ অপরাধ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট বর্ণনা তুলে ধরেছেন। কোরআনে সে বিধানের আয়াতগুলো তুলে ধরা হলো-
الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَائِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ
‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ২)
وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘যারা তাদের স্ত্রীদের মা বলে ফেলে, অতপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ করার আগে একটি দাসকে মুক্তি দেবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৩)
فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ذَلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার আগে বিরতিহীনভাবে দুই মাস রোজা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকিনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক আজাব।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৪)
তাছাড়া এ সুরায় পরস্পরের কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা করা নিষিদ্ধ। যারা এমনটি করবে তাদের জন্য রয়েছে সীমালঙ্ঘনের শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ نُهُوۡا عَنِ النَّجۡوٰی ثُمَّ یَعُوۡدُوۡنَ لِمَا نُهُوۡا عَنۡهُ وَ یَتَنٰجَوۡنَ بِالۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ وَ مَعۡصِیَتِ الرَّسُوۡلِ ۫ وَ اِذَا جَآءُوۡکَ حَیَّوۡکَ بِمَا لَمۡ یُحَیِّکَ بِهِ اللّٰهُ ۙ وَ یَقُوۡلُوۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ لَوۡ لَا یُعَذِّبُنَا اللّٰهُ بِمَا نَقُوۡلُ ؕ حَسۡبُهُمۡ جَهَنَّمُ ۚ یَصۡلَوۡنَهَا ۚ فَبِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ
'আপনি কি ভেবে দেখেননি, যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল অতপর তারা নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচার, সীমালংঘন এবং রাসুলের অবাধ্যতার বিষয়েই কানাঘুষা করে। তারা যখন আপনার কাছে আসে, তখন আপনাকে এমন ভাষায় সালাম করে, যা দ্বারা আল্লাহ আপনাকে সালাম করেননি। তারা মনে মনে বলে, আমরা যা বলি, এ জন্য আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্যে যথেষ্ট। তারা তাতে প্রবেশ করবে। কতই না নিকৃষ্ট সেই জায়গা।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৮)
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا تَنَاجَیۡتُمۡ فَلَا تَتَنَاجَوۡا بِالۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ وَ مَعۡصِیَتِ الرَّسُوۡلِ وَ تَنَاجَوۡا بِالۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡۤ اِلَیۡهِ تُحۡشَرُوۡنَ
'মুমিনগণ, তোমরা যখন কানাকানি কর, তখন পাপাচার, সীমালংঘন ও রসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো। আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর কাছে তোমরা একত্রিত হবে।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৯)
اِنَّمَا النَّجۡوٰی مِنَ الشَّیۡطٰنِ لِیَحۡزُنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ لَیۡسَ بِضَآرِّهِمۡ شَیۡئًا اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ عَلَی اللّٰهِ فَلۡیَتَوَکَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
'এই কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্যে। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ১০)
এ সুরায় যিহার সম্পর্কিত শরিয়তের বিধান আলোচিত হয়েছে। তানজি বা গোপন কান পরামর্শ সম্পর্কিত বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। বৈঠক ও মজলিশের আদব-কায়দার বিবরণ ওঠে এসেছে এ সুরায়। সর্বোপরি এ সুরার শেষে আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে শত্রুতা পোষণকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণের পাশাপাশি অপমানজনক শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরা হাশর : আয়াত ০১-২৪
এ সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। ইয়াহুদি ও মুনাফিকদের শাস্তির বিবরণ স্থান পেয়েছে। কেননা তারা সব সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত থাকতো। এ সুরার প্রথমাংশে আল্লাহর গুণাবলী এবং কাফির বনু নজির গোত্রের মদিনা থেকে নির্বাসনের কথা এসেছে। যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কিত আইনের ধারা ঘোষণা করা হয়েছে এ সুরায়। যুদ্ধে প্রাপ্ত অর্থ-সম্পদ বণ্টনের বর্ণনাও দেয়া হয়েছে।
মুনাফিকদের আচার-আচরণ ও কু-প্রবৃত্তির আলোচনার পাশাপাশি আল্লাহর একত্ববাদের আগ্রহ-উপদেশ, ঈমানের উপকরণ, ঈমানদার ও বেঈমানের মাঝে পার্থক্য ও ঈমানের গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। এ সুরায় ঈমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান ওঠে এসেছে। আল্লাহর শেখানো দোয়াটি হলো-
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।'
এ সুরায় মহান আল্লাহকে ভয় করতে হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহকে ভুলে থাকা মুমিনের কাজ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
'মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা'আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ তা'আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আত্ন বিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য।' (সুরা হাশর : আয়াত ১৮-১৯)
আল্লাহ মানুষকে জীবন-বিধান হিসেবে কুরআন দিয়েছেন। এ কুরআন যদি অন্য কোনো সৃষ্টির উপর নাজিল করা হতো তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান থাকতো। আল্লাহ তাআলার সে ঘোষণা-
لَوۡ اَنۡزَلۡنَا هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ عَلٰی جَبَلٍ لَّرَاَیۡتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕ وَ تِلۡکَ الۡاَمۡثَالُ نَضۡرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ
' যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা'আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।' সুরা হাশর : আয়াত ২১)
সকাল-সন্ধ্যার সেরা আমল
আল্লাহ তাআলার গুণের বর্ণনাও ওঠে এসেছে এ সুরায়। আর তা সকাল-সন্ধ্যায় এ তিনটি আয়াত পড়ায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। আর তাহলো-
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ - هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ - هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ : তিনিই আল্লাহ তা'আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ন?শীল । তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা' আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তা'আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।' (সুরা হাশর : আয়াত ২২-২৪)
সুরা হাশরের এ তিন আয়াত তেলাওয়াতের ফজিলত হলো- ৭০ হাজার ফেরেশতা তার পাঠকারীর জন্য মাগফেরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।
সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ০১-১৩
মদিনায় অবতীর্ণ সুরা মুমতাহিনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরা। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন কাফিরদের সঙ্গে কোনো প্রকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক না রাখে। অনুগত বান্দা কিভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থন করবে তা ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
উচ্চারণ : 'রাব্বানা আলাইকা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলাইকা আনাবনা ওয়া ইলাইকাল মাসির।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৪)
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।'
২. رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
উচ্চারণ : রাব্বানা লা তাঝআলনা ফিতনাতাল লিল্লাজিনা কাফারু ওয়াগফিরলানা রাব্বানা ইন্নাকা আংতাল আযিযুল হাকিম।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৫)
অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।'
এ সুরায় ঈমানদার নারীদের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا جَآءَکُمُ الۡمُؤۡمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامۡتَحِنُوۡهُنَّ ؕ اَللّٰهُ اَعۡلَمُ بِاِیۡمَانِهِنَّ ۚ فَاِنۡ عَلِمۡتُمُوۡهُنَّ مُؤۡمِنٰتٍ فَلَا تَرۡجِعُوۡهُنَّ اِلَی الۡکُفَّارِ ؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمۡ وَ لَا هُمۡ یَحِلُّوۡنَ لَهُنَّ ؕ وَ اٰتُوۡهُمۡ مَّاۤ اَنۡفَقُوۡا ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ اَنۡ تَنۡکِحُوۡهُنَّ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡهُنَّ اُجُوۡرَهُنَّ ؕ وَ لَا تُمۡسِکُوۡا بِعِصَمِ الۡکَوَافِرِ وَ سۡـَٔلُوۡا مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ وَ لۡیَسۡـَٔلُوۡا مَاۤ اَنۡفَقُوۡا ؕ ذٰلِکُمۡ حُکۡمُ اللّٰهِ ؕ یَحۡکُمُ بَیۡنَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
'মুমিনগণ, যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে, তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদের দিয়ে দাও। তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ, তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে। এটা আল্লাহর বিধান; তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।' [ সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১০)
وَ اِنۡ فَاتَکُمۡ شَیۡءٌ مِّنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ اِلَی الۡکُفَّارِ فَعَاقَبۡتُمۡ فَاٰتُوا الَّذِیۡنَ ذَهَبَتۡ اَزۡوَاجُهُمۡ مِّثۡلَ مَاۤ اَنۡفَقُوۡا ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡۤ اَنۡتُمۡ بِهٖ مُؤۡمِنُوۡنَ
'তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাতছাড়া হয়ে কাফেরদের কাছে থেকে যায়, অতঃপর তোমরা সুযোগ পাও, তখন যাদের স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাদেরকে তাদের ব্যয়কৃত অর্থের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস রাখ।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১১)
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا جَآءَکَ الۡمُؤۡمِنٰتُ یُبَایِعۡنَکَ عَلٰۤی اَنۡ لَّا یُشۡرِکۡنَ بِاللّٰهِ شَیۡئًا وَّ لَا یَسۡرِقۡنَ وَ لَا یَزۡنِیۡنَ وَ لَا یَقۡتُلۡنَ اَوۡلَادَهُنَّ وَ لَا یَاۡتِیۡنَ بِبُهۡتَانٍ یَّفۡتَرِیۡنَهٗ بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِنَّ وَ اَرۡجُلِهِنَّ وَ لَا یَعۡصِیۡنَکَ فِیۡ مَعۡرُوۡفٍ فَبَایِعۡهُنَّ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُنَّ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
'হে নবি, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)
সুরা সফ : আয়াত ০১-১৪
সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরায় আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য মুসলমানদের উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে দুনিয়াতে বিজয়ী করবেন; এতে যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন? এ জন্য মুমিন বান্দাকে ঈমানের ক্ষেত্রে ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অবলম্বন করা নির্দেশ এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ صَفًّا کَاَنَّهُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ
'আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।' (সুরা সফ : আয়াত ৪)
এ সুরায় আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ দিয়ে উত্তম কেনাবেচার কথা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا هَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ - تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُجَاهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ - یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَ یُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ وَ مَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ - وَ اُخۡرٰی تُحِبُّوۡنَهَا ؕ نَصۡرٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَتۡحٌ قَرِیۡبٌ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
'হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।' (সুরা সফ : আয়াত ১০-১৩)
এ সুরায় হজরত ইসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে য, তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। তিনি বনি ইসরাইল জাতিকে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡۤا اَنۡصَارَ اللّٰهِ کَمَا قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ لِلۡحَوَارِیّٖنَ مَنۡ اَنۡصَارِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ قَالَ الۡحَوَارِیُّوۡنَ نَحۡنُ اَنۡصَارُ اللّٰهِ فَاٰمَنَتۡ طَّآئِفَۃٌ مِّنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ وَ کَفَرَتۡ طَّآئِفَۃٌ ۚ فَاَیَّدۡنَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا عَلٰی عَدُوِّهِمۡ فَاَصۡبَحُوۡا ظٰهِرِیۡنَ
'মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলে র একদল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম, ফলে তারা বিজয়ী হল।' (সুরা সফ : আয়াত ১৪)
সুরা জুমআ : আয়াত ০১-১১
মদিনায় অবতীর্ণ সুরা জুমআয় আল্লাহ তাআলা নিজের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, সকল জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, তরুলতা তথা আসমান-জমিনের সকল সৃষ্টি জগতের মতো তোমরা মানবজাতিও তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা কর।
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি নিজেদের জীবিকার তাগিদে জমিনে বিচরণের নির্দেশ করেছেন। সর্বশেষ জুমআর নামাজ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। যেখানে জুমআনর নামাজের জন্য আহ্বান করার পর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ - فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
'হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।' (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)
সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ০১-১১
মদিনায় অবতীর্ণ সুরাটিতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর মুনাফিকরা মারাত্মক বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা বিশ্বনবির দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণের কথা বলে আবার গোপনের অবিশ্বাসীদের সঙ্গে আতাত করে। যার ফলে তাদের সম্পর্কে এ সুরা অবতীর্ণ হয়।
এ সুরায় মুসলমানদেরকে দুনিয়ার লোভ-লালসা, সৌন্দর্য, ফ্যাশনে পড়ে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য হতে দূরে সরে না যেতে বলা হয়েছে। যেমনিভাবে মুনাফিকরা সরে গেছে। আর আল্লাহ ইবাদাত থেকে বিরত থাকা মারাত্মক ক্ষতি।
দুনিয়ায় মানুষের সন্তান-সন্তুতি ও ধন-সম্পদের কারণে বেখেয়াল হয়ে আল্লাহকে ভুলে না যায়। সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
'হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।' (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ৯)
সর্বোপরি যারা মুখে ঈমানের দাবি করলেও তাদের অন্তরে ঈমানের ছিটেফোঁটাও ছিল না। তাদের বিষয়ে এ সুরা নাজিল হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের আবেদনের কথাকে এভাবে তুলে ধরেন-
وَ اَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡ لَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَکُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ - وَ لَنۡ یُّؤَخِّرَ اللّٰهُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا ؕ وَ اللّٰهُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
'আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।' (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ১০-১১)
সুরা তাগাবুন : আয়াত ০১-১৮
মদিনায় অবতীর্ণ সুরা তাগাবুনে আল্লাহর কুদরত, মহত্ত্ব এবং বড়ত্বের আলোচনার পর মানুষের মধ্যে যারা আল্লাহকে স্বীকার করে আর যারা স্বীকার করে না তাদের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার সিফাত সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরায় ও মুনফিকদের সম্পর্কে সতর্কবানী উচ্চারণ করা হয়েছে। যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের জন্য কোনো বিপদ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَاۤ اَصَابَ مِنۡ مُّصِیۡبَۃٍ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یُّؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ یَهۡدِ قَلۡبَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ
'আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ।' (সুরা তাগাবুন : আয়াত ১১)
প্রত্যেক বিপদই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং তাঁরই ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন, এই আয়াত অবতীর্ণের কারণ হল কাফেরদের এই উক্তি, যদি মুসলমানরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে দুনিয়াতে কোনো বালা-মসিবত তাদের উপর আসতো না।' (ফাতহুল কাদির)
আর সে জেনে নেয় যে, তার উপর যে বিপদই এসেছে, তা আল্লাহর ইচ্ছায় এবং তাঁর নির্দেশে এসেছে। ফলে সে ধৈর্য ধরে এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। হাদিসে এসেছে-
হজরহত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, 'তার অন্তরে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করে দেন। ফলে সে জেনে যায় যে, তার উপর যে বিপদ আসার আছে, তা টলতে পারে না এবং যা তার উপর আসার নয়, তা আসতে পারে না।' (ইবনে কাছির)
সুরা ত্বালাক্ব : আয়াত ০১-১২
মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরায় ত্বালাক সম্পর্কিত বিধি-বিধান আলোচিত হয়েছে। তালাক পরবর্তী ইদ্দত সম্পর্কিত বিধি-বিধান, শিশু সন্তান থাকলে তাদের সর্ম্পকিত বিধানও আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَ اَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡهُنَّ مِنۡۢ بُیُوۡتِهِنَّ وَ لَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰهَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ اَمۡرًا
'হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দাও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন। (সুরা তালাক : আয়াত ১)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন যে, তিনি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি খুব নারাজ হয়ে বললেন, র উচিত হায়েয অবস্থায় তালাক প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং স্ত্রীকে বিবাহে রেখে দেওয়া। (তালাকটি রাজয়ী তালাক ছিল, যাতে প্রত্যাহারের সুযোগ থাকে) এই হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর আবার যখন স্ত্রীর হায়েয হবে এবং তা থেকে পবিত্র হবে, তখন যদি তালাক দিতেই চায়, তবে সহবাসের আগে পবিত্র অবস্থায় তালাক দেবে। এই ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক প্রদানের আদেশই আল্লাহ তাআলা (আলোচ্য) আয়াতে দিয়েছেন৷' (বুখারি, মুসলিম)
এখানে ইদ্দত অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে কি ব্যবহার করতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বলা হচ্ছে, স্ত্রীদেরকে তাদের ঘর থেকে বহিষ্কার করো না। এখানে তাদের ঘর বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যে পর্যন্ত তাদের বসবাসের হক পুরুষের দায়িত্বে থাকে, সেই পর্যন্ত ঘরে তাদের অধিকার আছে।' (ইবনে কাছির)
প্ৰকাশ্য নির্লজ্জ কাজ বলে কি বোঝানো হয়েছে, এ সম্পর্কে তিন প্রকার উক্তি বৰ্ণিত আছে-
এক. নির্লজ্জ কাজ বলে খোদ ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়াই বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় এটা দৃশ্যত ব্যতিক্রম, যার উদ্দেশ্য ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া নয়; বরং নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরদার করা। অর্থাৎ তালাকপ্ৰাপ্ত স্ত্রীরা তাদের স্বামীর ঘর থেকে বের হবে না, কিন্তু যদি তারা অশ্লীলতায়ই মেতে উঠে ও বের হয়ে পড়ে তবে সে গুণাহগার হবে। সুতরাং এর অর্থ বের হয়ে যাওয়ার বৈধতা নয়; বরং আরও বেশি নিন্দা ও নিষিদ্ধতা প্রমাণ করা।
দুই. নির্লজ্জ কাজ বলে ব্যভিচার বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যতিক্রম যথার্থ অর্থেই বুঝতে হবে। অর্থাৎ তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ব্যভিচার করলে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তার প্রতি শরিয়তের শাস্তি প্রয়োগ করার জন্যে অবশ্যই তাকে ইদ্দতের ঘর থেকে বের করা হবে।
তিন. নির্লজ্জ কাজ বলে কটু কথাবার্তা, ঝগড়া-বিবাদ বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ হবে এই যে, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের তাদের ঘর থেকে বহিষ্কার করা জায়েয নয়। কিন্তু যদি যারা কটুভাষিণী ও ঝগড়াটে হয় এবং স্বামীর আপনজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তবে তাদেরকে ইদ্দতের গৃহ থেকে বহিষ্কার করা যাবে।' (কুরতুবি)
فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمۡسِکُوۡهُنَّ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ فَارِقُوۡهُنَّ بِمَعۡرُوۡفٍ وَّ اَشۡهِدُوۡا ذَوَیۡ عَدۡلٍ مِّنۡکُمۡ وَ اَقِیۡمُوا الشَّهَادَۃَ لِلّٰهِ ؕ ذٰلِکُمۡ یُوۡعَظُ بِهٖ مَنۡ کَانَ یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۬ؕ وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ مَخۡرَجًا ۙ
'এরপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু'জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।' (সুরা তালাক : আয়াত ২)
এ সুরায় আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার কথা বলা হয়েছে। এ ভয় করায় রয়েছে অনেক নেয়ামত লাভের ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
সমস্যার সমাধানে তাকওয়া
যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার রোগ-শোক,বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ২)
নিশ্চিন্ত রিজিক পেতে তাক্বওয়া
যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহ তাকে এমন ব্যবস্থাপনায় রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন, যা বান্দা কল্পনাও করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘আর (যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে তিনি) তাকে রিজিক দেবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারে না।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৩)
সব কাজ সহজে তাকওয়া
কাজ যত কঠিন হোক না কেন, বিপদ যত কঠিন হোক না কেন, মহামারি যত কঠিন হোক না কেন, আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহ তার কঠিন কাজও সহজ করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন-
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مِنْ أَمْرِهِۦ يُسْرًا
‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৪)
গুনাহ মাফ ও প্রতিফল পেতে তাকওয়া
তাক্বওয়া এমন একটি আমল, যা মুত্তাকি ব্যক্তির গোনাহ মোচন করে দেয় এবং অনেক বড় প্রতিফল দান করেন বলেও ঘোষণা দেয়-
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّـَٔاتِهِۦ وَيُعْظِمْ لَهُۥٓ أَجْرًا
‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেবেন, আর তার প্রতিফলকে বিশাল বিস্তৃত করে দেবেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৫)
সুরা তাহরিম : আয়াত ০১-১২
মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুরা। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা হালাল-হারাম সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা এ সুরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্রা স্ত্রীগণের কতিপয় ঘটনার বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।
দুনিয়া স্ত্রীদের উচিত স্বামীদের কথা, সম্পদ ইত্যাদি বিষয়ের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকা। কেননা স্বামীর সম্পদ, কথা-বার্তা বা তথ্য সবই আমানত। তা যেন কোনোভাবেই খেয়ানত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা। স্বামীর কোনো কথা অন্যের কাছে না বলা।
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুমিনদের ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
'হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।' (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)
এ সুরায় মুমিন বান্দার ক্ষমা প্রার্থনায় ওঠেছে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। আর তাহলো-
رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।' (সুরা তাহরিম : আয়াত ৮)
সর্বোপরি এ সুরায় আল্লাহ তাআলা নারী জাতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি কিভাবে অর্জিত হবে তার পথনির্দেশ করেছেন এ সুরায়। পারস্পারিক ধৈর্য, সহনশীলতা, ন্যায়বিচার ও পরস্পরের হক আদায় প্রসঙ্গে নীতিমালা প্রণীত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম