জাতীয়

গুম থেকে ৫ মাস ১১ দিন পর বাড়ি ফেরা একজনের জবানবন্দি

গুম থেকে ৫ মাস ১১ দিন পর বাড়ি ফেরা একজনের জবানবন্দি

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৭ সালে তৎকালীন ডিজিএফআই ও র‌্যাব-৪ এর কর্মকর্তাদের দ্বারা অপহৃত ও গুম হয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সী যুবক সানোয়ার হোসেন (ছদ্মনাম)। পাঁচ মাস ১১ দিন পর নিজ বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।

Advertisement

গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে অপহৃত সানোয়ার হোসেন প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস গুম থাকার পর বাসায় ফেরার পর কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন তা সবিস্তারে বলেছেন।

বুধবার (৪ জুন) প্রধান উপদেষ্টা ড, মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দ্বিতীয় ধাপের প্রতিবেদন জমা দেয় গুম কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রতিবেদনের দুটি অধ্যায় প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময় জবরদস্তি গুমের যে প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা সবচেয়ে প্রধান প্রভাব ছিল ভয়ের ও নিরাপত্তার এক ব্যাপক সংস্কৃতি বিস্তার, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক জীবনে মারাত্মকভাবে নিরুৎসাহ। এই সংস্কৃতি ব্যক্তিগত জীবনেও গভীরভাবে প্রবেশ করেছিল, এমনকি নিজ নিজ ঘরে নিরাপদ পরিবেশে বসবাসকারী পরিবারগুলোতেও এক ধরনের ভীতির আবহাওয়া তৈরি করেছিল।

Advertisement

আরও পড়ুনগুম-খুন-নির্যাতন: গণভবনে হবে ‘হরর মিউজিয়াম’প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্বিতীয় প্রতিবেদন জমা দিলো গুম কমিশনর‌্যাব সরাসরি গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল৬৭ শতাংশেরও বেশি গুমের মামলায় জড়িত পুলিশ-র‌্যাব-ডিবি-সিটিটিসি

প্রতিবেদনে সানোয়ার হোসেনের জবানবন্দিতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমি জেল থেকে যখন বাড়িতে গেছি, আমাদের জোরে কথা বলতে দিতো না। আমাদের মেইন রোডের পাশেই বাড়ি। অনেক সময় কথা বললে একটু বাড়ির বাইরে আওয়াজ চলে যায়, তাই জোরে কথা বলতে দিতো না। আব্বার ভয় হলো যে, যদি আমার কোনো কথার আওয়াজ বাইরে যায়!... আব্বা কইতো যে, ‘একটা থেকে বাইচে আসছোস, এ পর্যন্ত থাক’।’

‘আমি বলতাম যে আব্বা আমারে কেউ মারবে আমি কি একটু কানতেও পারুম না? কয় যে না, কাঁদার বহু সময় আছে, আল্লাহ কাঁদার সময় দিবো। এখন তুই কানতেও পারবি না। তুই কান্দা ছাড়াই থাক।’

জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, ‘আব্বার দেখাদেখি আমার ওয়াইফও আমার সাথে প্রায় সময়ই কঠোর আচরণ করতো। কোনো একটা বিষয় আসলে যদি আমি বলতাম যে ওরা আমাদের জমিগুলি অন্যায়ভাবে দখল করে রাখবে আপনারা কোনো কথা বলবেন না এটা হইলো? আমার অধিকার কি আমি নিতে পারমু না? মাইরা ফেলবে জন্য? গুম খুন করে ফেলবে? তো ওরা তো ওই চেষ্টা করছেই। এজন্য কি আমি জমির পাশে যাইয়া দাঁড়াইতে পারমু না? তো আমার ওয়াইফ আমার ভাইয়েরে ফোন দিতো যে আপনি আপনার ভাইরে বোঝান, উনি যাতে এগুলোর কথা না বলে। জমি যা হয় হবে। জমি তকদিরে থাকলে আসবে।’

‘(৫ আগস্টের পর) সরকার কী হইছে না হইছে ওইটা আমার খুব বেশি মাথাব্যথার বিষয় না। তকদিরে যেটা আছে এটা তো হবে। বাকি আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা উপলব্ধি করি যে, এখন আমার ওয়াইফ আমারে কথা বলার জন্য আর ধমক দেয় না।’

Advertisement

এমইউ/বিএ/জেআইএম