রাত পোহালেই ঈদ। তবে এখনো ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটে আটকা ঘুরমুখো মানুষ। ২ ঘণ্টার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে যানজটে পড়ে নাকাল যাত্রী ও চালকরা। শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
Advertisement
যাত্রী আবু বক্কর জাগো নিউজকে বলেন, কোনাবাড়ি থেকে ভোর ৫টার দিকে রওনা হয়েছি। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত সেতু পারি হতে পারিনি। রাস্তায় প্রচুর যানজট। ঈদের নামাজের আগে বাড়িতে পৌঁছাতে পারবো কি না, সেই চিন্তায় আছি।
সামিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ করার জন্য কুড়িগ্রামে বাড়িতে যাবো। ভোর ৫টায় বাসা থেকে রওনা হয়েছি। রাস্তায় প্রচুর যানজট থাকায় যমুনা সেতু পার হতে পারিনি। খুবই বাজে অবস্থা। আমরা খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করতে পারিনি। আমাদের এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?
ট্রাকচালক মোহাম্মদ মেজবাউল জাগো নিউজকে বলেন, নরদিংসী থেকে রাত ১০টায় গাড়ি ছেড়েছি, যাবো দিনাজপুরে। এখন পর্যন্ত যমুনা সেতু পার হতে পারিনি। রাস্তায় কঠিন যানজট। বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারবো কি না তা জানা নেই।
Advertisement
নওগাঁগামী বাসচালক টিটু জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকা থেকেই প্রচুর যানজট। গতকালও রাস্তায় দীর্ঘ যানজট ছিল। ঢাকা থেকে আসতে ১৪ ঘণ্টা ও ১৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। আমরা নিরাপদ সড়কের দাবি করছি।
শুক্রবার সকাল থেকে এ মহাসড়কের যমুনা সেতু থেকে করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে জামুর্কি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, সেতুর ওপর গাড়ি বিকলসহ বিভিন্ন কারণে বুধবার ভোর ৪টা থেকে মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাস থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সেই যানজট সারাদিন পেরিয়ে সারারাত অব্যাহত থাকে। ফলে বাড়তে থাকে মহাসড়কের যানজট।
এদিকে যমুনা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ঈদযাত্রায় ছোটবড় বিভিন্ন ধরনের ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় এ রেকর্ডের সৃষ্টি হয়। যা যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর নতুন রেকর্ড। এদিন ছোটবড় বিপুল সংখ্যক গাড়ি পারাপার হওয়ায় ৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০ টাকার টোল আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেতু চালু হওয়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায়েও নতুন রেকর্ড এটি।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৪৩ হাজার ৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকা। অপরদিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ২৮০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ২৫০ টাকা।
Advertisement
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় ছোটবড় ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় এ নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হয়েছে। সেতু চালু হওয়ার পর একদিনে যানবাহন ও টোল আদায়ের এই হার একসঙ্গে সর্বোচ্চ। যমুনা সেতুর দুই পাশে ৯টি করে মোট ১৮ বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এর মধ্যে দুইপাশেই দুটি করে বুথ দিয়ে আলাদাভাবে মোটরসাইকেলের জন্য পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে আমরা নিরসলভাবে কাজ করছি।
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এফএ/এমএস